তালায় বিভিন্নস্থানে বিক্ষোপ্তভাবে ভাংচুর অগ্নিসংযোগসহ লুটপাট,জনসাধারণ নিরাপত্তাহীনতায়
জৌষ্ঠ প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে ভাংচুর,অগ্নি সংযোগসহ লুটপাটের ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতা জনসাধারণ। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা আদায়ে গত সোমবার (৫আগস্ট) সরকার পতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে তালা উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে এক দল দুষ্কৃতকারীরা বিক্ষিপ্ত ভাবে অরাজকতা সৃষ্টি করে।
এ সকল ঘটনায় বাদ পড়েনি সাংবাদিক,সেনা কর্মকর্তা,শিক্ষকসহ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের বাড়ি। অন্যদিকে গ্রামে গ্রামে বিএনপি ও জামায়তের লোকজন পাহারা বসালেও বন্ধ হচ্ছে না দুষ্কৃতকারীদের চাঁদাবাজি ও ধ্বংসযজ্ঞ। প্রশাসনের নিষ্কৃয় ভুমিকার কারনে নিরাপত্তা হীনতায় পড়ে জনসাধারন। গত সোমবার থেকে তালা উপজেলা দেড় থেকে দুই শতাধিক বাড়ি ভাংচুর ও লুট হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা । প্রাথমিকভাবে হামলারকারীদের কোন দলীয় সর্মথক তার নির্দিষ্ট কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি।
মাগুরা ইউপি চেয়ারম্যান গনেশ দেবনাথ জানান, গত মঙ্গলবার রাত ১০ টার দিকে তার বাড়িতে একদল দূর্বিত্তরা গিয়ে লুটপাট,অগ্নিসংযোগ ভাংচুর ও নগদ টাকা স্বর্ণ র্অলংকার নিয়ে ক্ষান্ত হয়নি, এরপর যাবতীয় আসবাবপত্র আগুন ধরিয়ে দেয়।
খলিশখালী ইউনিয়নের এক স্কুল শিক্ষক বিশ্বজিৎ লাহিড়ী জানান,গত মঙ্গলবার ৭/৮ জনের একদল মুখোশধারী ডাকাত দল অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তার পরিবারের সবাইকে বেধড়ক মারপিট করে জখম করে। এসময় ডাকাত দল নগত ৭০ হাজার টাকা ও ৫ ভরি স্বর্নালঙ্কার নিয়ে যায়।
কুমিরা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আজিজুল ইসলাম জানান,তার বাড়িতে হামলাসহ তার মুদি দোকান থেকে প্রায় ২০ লক্ষ টাকার মালামাল লুট হয়। স্থানীয় একটি অনলাইন পোর্টাল দৈনিক ৭১ বাংলা নামক এক পত্রিকার কার্যালয় অগ্নি সংযোগ ঘটনায় প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকার মালামাল পুড়ে যায় বলে জানান,পত্রিকার সম্পাদক নাজমুল হাসান মিঠু। সেই সাথে তার বাড়িতে হামলা সহ জীবন নাশের হুমকি প্রদান করে।
হাজারাপাড়া এলাকার সেনা কর্মকর্তা শিবাজী লাহেড়ী জানান,তিনি কর্মসূত্রে চট্রগ্রামে চাকুরী করেন। সরকার পতনের পরপরই মঙ্গলবার রাতে একদল দূর্বিত্তরা তার বাড়িতে এসে জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। এসময় তারা বাড়ির ভিতরে মন্দির ভাংচুর করে এবং রান্না ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পাটকেলঘাটা বাজারের ব্যবসায়ী রুপায়ন হাজরা জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার পতনকে কেন্দ্র করে গত সোমবার বিকালে একটি আনন্দ মিছিল বের হয়ে পাটকেলঘাটা বাজারে আসে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তার দোকানে লুটাপাট চালায় একদল দূর্বিত্ত। ওই সময় তারা দোকান ভাংচুর করে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার মালামাল লুটপাট করে।
খলিষখালী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিটিভির জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক মোজাফফর রহমান জানান, সরকার পতনের পরে দিন মঙ্গলবার সকালে তার পাটকেলঘাটা বাজারে বাড়ি দখল করে নেয় দূর্বিত্তরা। ঘটনার পরপরই তার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ভাংচুর চালিয়ে জিনিসপত্র লুট সহ টাকা নিয়ে যায়। ওই সময়ে তারা বাড়ির ভিতরের চারটি গরু জোরপূর্বক নিয়ে যায়। এরপর থেকে হামলাকারীদের মধ্যে একজন তার শালক মনোয়ার আলম মিশুর কাছে দশ লক্ষ টাকার চাঁদাদাবী করে আসছে।
তালা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও খলিলনগর ইউপি চেয়ারম্যান প্রনব ঘোষ বাবলু জানান,সোমবার সন্ধ্যার দিকে তালা বাজারে আনন্দ মিছিল চলছিল। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একদল দূর্বিত্ত তার বাড়িতে এসে লুটপাট করে। সেই সাথে তার বৃদ্ধ মাকে মারপিট করে।
তালা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মৃনাল কান্তি রায় জানান,উপজেলা জুড়ে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তা নিন্দনীয়। এর দায়ভার কে নিবে এটাই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমানে। এসকল হামলা ও লুটপাট বন্ধে বিএনপির উপরিমহলের নির্দেশে স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ কমিটি করে পাহারা বসানো হয়েছে। যেন আর কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমাদের পক্ষ থেকে মাইকিং চলছে। সেই সাথে সকলকে সর্তক থাকার আহবান জানান তিনি। যেন অনাকাঙিক্ষত এ সকল ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান,জরুরী সেবা বন্ধ থাকায় হামলার সঠিক কোন পরিসংখ্যান আমদের কাছে নেই। এ সকল ঘটনায় কোন মামলা হয়েছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবের উত্তরে তিনি বলেন,উপর থেকে নির্দেশ না আসার কারণে আমরা সার্বিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছি না জানান তিনি।