নড়াইলে বৈশাখের তাপমাত্রা যেন কোনভাবেই কমছে না।
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি
নড়াইলে বৈশাখের তাপমাত্রা যেন কোনভাবেই কমছে না। দেখা নেই মেঘবৃষ্টির। ভোর থেকে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাপমাত্রা। দেশজুড়ে চলা গত কয়েকদিনের এই দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে দক্ষিণের জেলা নড়াইলের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দিশেহারা হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। বিশেষ করে এ সময় চরম বিপাকে পড়েছেন এ জেলার বোরো ধান চাষিরা। উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান, সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গরমের কারণে ভোর সকাল থেকে ধান কাটা শুরু করছে কেউ কেউ। কিন্ত বেলা ১০টা থেকে ১১টার পর গরমে আর মাঠে কাজ করতে পারছে না কৃষকেরা। কিছু সময় কাজ করলে হাঁপিয়ে উঠছে। ঘামে পরণের কাপড় ভিজে একাকার। কাজের মাঝে বারবার বিশ্রাম নিতে হচ্ছে। এতে কাজের গতি কমে যাচ্ছে। গরমের কারণে শ্রমিকেরও সংকট দেখা দিয়েছে। শ্রমিক পাওয়া গেলেও দিতে হচ্ছে চড়া মূল্য। তবে যেকোনো সময় বৃষ্টি শুরু হলে জমি থেকে এই পাকা ধান বাড়িতে নিতে বিড়ম্বনা এবং ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তাই তীব্র গরমকে সঙ্গে নিয়ে, অধিক কষ্ট করে ধান কাটছে কৃষকেরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল মোট ৫০ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ৫০ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে ২০ শতাংশ জমির ধান কর্তন হয়েছে।
সদর উপজেলার সাতঘরিয়া এলাকার কৃষক গোপাল রায় বলেন, গরমে অস্থির। কেউ শ্রম দিতে চায় না। তাই ছেলেপেলে নিয়ে ভোর ৫টায় মাঠে আসছি। সাড়ে ৯টার বেশি থাকা যাবে না। শরীরের অবস্থা খুব খারাপ। এমন গরম জীবনে কোনদিন দেখি নাই। গরমে যতদ্রুত পারি ধান বাড়ি নেওয়ার চেষ্টা করছি।
আরেক কৃষক সন্টু সরকার বলেন, শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। নিজের জমি তাই ৬৫ বছর বয়সেও জিড়িয়ে জিড়িয়ে ধান কাটতেছি।
বৃষ্টি হলে জমিতে পানি বেঁধে যাবে। এজন্য অতিরিক্ত গরমেও খুব কষ্ট করে কাটতিছি।
গরমে শ্রমজীবী মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে নড়াইল সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. আসাদুজ্জামান টনি বলেন, গরমে শ্রমজীবী মানুষের সবচেয়ে বড় যে ঝুঁকি সেটি হল হিটস্ট্রোক। এজন্য প্রত্যককে অবশ্যই এক বোতল পানি কাছে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ পরপর পানি খাবে এবং চোখেমুখে পানি দেবে। রোদ এড়াতে ছাতা বা টুপি মাথায় দিতে হবে। ডায়রিয়া এড়াতে কোনো বাসি খাবার খাওয়া যাবে না, টাটকা খাবার খেতে হবে।
নড়াইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আশেক পারভেজ বলেন, বৃষ্টিহীন পরিবেশ থাকলে কৃষকের ধান কাটা থেকে শুরু করে পরবর্তী ধাপে যেতে সহজে হয়। এজন্য এই পরিবেশকে কৃষক ইতিবাচকভাবেই নেয়। কিন্তু যেহেতু গরম বেশি আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি যে, সকালবেলা ধান কেটে বিকেলবেলা বাড়িতে নিতে হবে। বৈরী আবহাওয়া আসার আগে দ্রুত ধান কেটে বাড়ি নিতে হবে। সেজন্য কম্বাইন হারভেস্টর ও রিপার মেশিন ব্যবহারের পরামর্শও দিচ্ছেন তারা।