নিয়মনীতি মানেননা, করেন না অফিস!
অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এক মূর্তিমাণ আতঙ্ক শ্যামনগর প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের প্রদীপ কুমার মন্ডল

প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী এমনকি জেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও এক মূর্তিমাণ আতঙ্কে পরিণত হয়েছেন প্রদীপ কুমার মন্ডল। সাতক্ষীরার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক পদে বদলির পর থেকে তিনি শিক্ষা অফিসের কোন নিয়মনীতি মানছেননা। করছেননা অফিস। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলছে বা বলেছে বুঝতে পারলেই তাকে দিচ্ছেন হুমকিধামকি। এমনকি গোপনে গোপনে শুরু করছেন নানান ষড়যন্ত্র। সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসে আবার তিনি ফিরে আসার জন্য তিনি মরিয়া হয়ে গেছেন। যেভাবেই হোক জেলা শিক্ষা অফিসে আবার তাকে আসতে হবে এই মিশনে নেমেছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসে চাকুরীকালিন সময়ে চাকুরী দেওয়ার নামে অর্থবানিজ্যসহ নানান অনিয়ম ও দূর্ণীতিতে জড়িয়ে পড়েন প্রদীপ কুমার মন্ডল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী দেওয়ার নামে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। অফিসে কেউ কোন কাজ নিয়ে আসলে তিনি টাকা ছাড়া কোন কাজই করতেন না। এরপর প্রদীপ কুমার মন্ডলকে বদলী করা হয় শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে। তবে অফিস বদল হলেও অভ্যাস বদল হয়নি প্রদীপ কুমার মন্ডলের। সেখাানেও তিনি জড়াতে শুরু করেন নানান রকম অনিয়ম ও দূর্ণীতিতে। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রদীপ কুমার মন্ডল মরিয়া হয়ে ওঠেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে আসার জন্য। তার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তিনি শুরু করেন অফিস ফাঁকি দেওয়া। তাকে কেউ কিছু বললেই হাইকমান্ডে তার অনেক আত্মীয় চাকুরী করেন, তার অনেক ধরাকরা লোকজন আছে বলে হুমকি দেন। এ কারণে তার বেতন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত সুপারিশ করেছেন শিক্ষা কর্মকর্তা। চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারী থেকে গত ১ আগস্ট পর্যন্ত তিনি শ্যামনগরে কর্মস্থলে যাননি। কর্তৃপক্ষ তাকে একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) করলেও তিনি তার কোন সদুত্তর দেননি। বরং কোন প্রকার পরীক্ষা না করেই তিনি সাতক্ষীরা শহরের নিরাময় ক্লিনিক থেকে বাবু নামের একজনকে ম্যানেজ করেই কুকুরে কামড়িয়েছে বলে একটি সার্টিফিকেট যোগাড় করে ছুটির জন্য আবেদন করেন। তবে সেই সার্টিফিকেটে প্রদীপ কুমার মন্ডল সুস্থ এবং তিনি কাজ করতে সক্ষম বলে ইংরেজিতে লেখা ছিল। ফলে তাকে কোন ছুটি মঞ্জুর করেননি শিক্ষা অফিস। তবে ৬ মাসেরও অধিক সময় পর গত ২ আগস্ট শ্যামনগর প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের বাইরে কয়েকজন বহিরাগতদের দাঁড় করিয়ে রেখে লাট সাহেবের মতো হঠাৎ শিক্ষা অফিসে হাজির হন এবং কাউকে কিছু না জানিয়ে হাজিরা খাতায় গত ১৯ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত স্বাক্ষর করে চলে যান। ওই ঘটনার পর থেকে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শ্যামনগর ও জেলা শিক্ষা অফিস সংশ্লিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘প্রদীপ কুমার মন্ডলের হাত অনেক লম্বা। তার বিরুদ্ধে আমরা কেউ কথা বলতে সাহস পায়না। সবসময় তার আতঙ্কে থাকি আমরা। কখন কার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে তাতো বলা যায়না।’
এ ব্যাপারে জানতে মঙ্গলবার(৮ আগস্ট) রাত ৮ টার দিকে ০১৭৩৬…০৫৬৪ নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও নম্বর বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাহীন হোসেন বলেন, ‘আমি ১ আগস্ট শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। ২ আগস্ট নিয়মনীতি অনুযায়ী প্রদীপ কুমার মন্ডলকে যোগদান করিয়েছি। ২ আগস্টের পর কি ঘটেছে সেটি আমি বলতে পারবোনা। এছাড়া যোগদানের আগের তারিখে তিনি যদি হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন সেটি গ্রহণযোগ্য হবেনা। এখানে যা কিছু হচ্ছে সেগুলো আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এসব ব্যাপারে তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমিন করিমী বলেন, ‘প্রদীপ কুমার মন্ডল অফিসে দীর্ঘদিন না যাওয়ার কারণে বিভাগীয় শাস্তির জন্য আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছি। এছাড়া তিন গত ২ আগস্ট কাউকে না জানিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে চলে এসেছেন বলে শুনেছি। বিষয়টি আমি খোঁজখবর নিচ্ছি। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ