সেই ল্যাব সহকারি সবুজের দ্বিতীয় স্ত্রীর নামেও রয়েছে কোটি টাকার ব্যবসা!
গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
সরকারি নীতিমালাকে পাশ কাটিয়ে সরকারি কর্মচারী মিজানুর রহমান সবুজ ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী মোছাঃ তাছমিন খাতুন গাইবান্ধা শহরের ফিরোজা মার্চেন্ট প্লাজায় “বেস্ট কম্পিউটার” নামে একটি কম্পিউটার পণ্যের কোটি টাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। তাদের এই ব্যবসা পরিচালনা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে সচেতন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
সবুজ জানান, তার স্ত্রী তাসলিমা খাতুন বর্তমানে মাগুরা জেলা সদর হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সহকারী হিসেবে নিয়োজিত আছেন। তবে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মাগুরা সদর হাসপাতালে ডায়ালাইসিস বিভাগের নয় তিনি আছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইসিজি) বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৩ সালে তিনি এই পদে যোগদান করেন।
সরকারি নীতিমালা অনুসারে, কোনো সরকারি কর্মচারী ব্যবসার সাথে সরাসরি যুক্ত হতে পারেন না। তবে, যদি ব্যবসায়িক কার্যক্রমে অংশ নিতেই হয়, তাহলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু মিজানুর রহমান সবুজের স্ত্রী তাছমিন খাতুন এ ধরনের কোনো অনুমতি নেননি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ফিরোজা মার্চেন্ট প্লাজায় অবস্থিত “বেস্ট কম্পিউটার” প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় বাজারে বড় আকারের কম্পিউটার পণ্যের সরবরাহকারী হিসেবে পরিচিত। প্লাজার সার্কুলার রোডে অবস্থিত এই দোকানটির সামনে বড় করে লেখা রয়েছে “বেস্ট কম্পিউটার”, এবং দোকানের পরিচালনার দায়িত্বে মিজানুর রহমান সবুজের নাম উল্লেখ রয়েছে।
মার্কেটের ভিতরে প্রবেশ করলে দেখা যায় কর্মব্যস্ত পরিবেশ। সেখানে নিয়োজিত ম্যানেজার এমদাদুলের ভাষ্যমতে, দোকানে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকার পণ্য মজুদ রয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী শহীদ ইসলাম জানিয়েছেন, এই প্রতিষ্ঠানটি চারটি দোকান একত্রিত করে একটি বৃহৎ দোকান স্থাপন করেছে এবং একটি আলাদা গোডাউনও রয়েছে তাদের।
মার্কেট মালিক কাজী ইব্রাহিম খলিল উলফাত জানান, মিজানুর রহমান সবুজ তার কাছ থেকে ২০২৩ সালে ৪ টি দোকান ১২ লক্ষ টাকা জামানত দিয়ে ৫ বছরের জন্য ভাড়া নিয়েছেন। এই মার্কেটের প্রতিটি দোকানের আয়তন ৯ বাই ১৪ ফুট, যা স্থানীয় চুক্তি অনুসারে সবুজ বিশাল এক ব্যবসায়িক ইউনিটে রূপান্তর করেছেন।
এ ব্যাপারে স্বত্বাধিকারী মোছাঃ তাছমিন খাতুন এবং পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মিজানুর রহমান সবুজের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তারা ফোন রিসিভ করেননি।
মাগুরা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মহাসিন আলীর সাথে মুঠোফোন এই বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, মোছাঃ তাছমিন খাতুন এই হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন, তবে গাইবান্ধায় তার ব্যবসা থাকার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
মহাসিন আলী বলেন, “একজন সরকারি কর্মচারীর ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়, তবে এই ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো অনুমতি তিনি আমার কাছ থেকে নেননি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।”
সরকারি নিয়মে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী তার নিজের নামে ব্যবসা করতে পারবেন না। এই নিয়ম লঙ্ঘন করে মিজানুর রহমান সবুজ ও তার স্ত্রী মোছাঃ তাসলিমা খাতুন কীভাবে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও পৌর প্রশাসক শরিফুল ইসলাম জানান, “সরকারি কর্মচারীরা চাকরির নিয়ম মেনে চলার বাধ্যবাধকতার রয়েছে। যদি কোনো সরকারি কর্মচারী নিয়ম বহির্ভূতভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে জড়িত থাকে, তবে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এই ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তদন্ত প্রয়োজন এবং প্রয়োজনীয় প্রমাণাদিসহ অভিযোগ প্রমাণিত হলে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারেন।”
প্রশাসক আরো জানান যে, সরকারি কর্মচারীদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ রয়েছে এবং আইনসম্মতভাবে তাদের এ ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার দরকার।
স্থানীয়রা মনে করছেন, সরকারি পদের অপব্যবহার করে তারা ব্যবসা পরিচালনা করছেন, যা সরকারি নীতির পরিপন্থী। সচেতন মহল থেকে বলা হচ্ছে, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা উচিত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।