৬০ ঘন্টার বৃষ্টিতে  ডুবল ভবদহের ৫০ গ্রাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি ঘর পানির নিচে,আশ্রয় খুজছে উচু স্থানে
প্রিয়ব্রত ধর,নওয়াপাড়াঃ
টানা ৬০ ঘন্টার বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে যশোরের ভবদহ অঞ্চলের বেশির ভাগ বাড়ি ঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।  আগস্ট মাসের ২৩, ২৪ ও ২৫ তারিখের থেমে থেমে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি ও সৃষ্ট নির্মচাপে চলতি মাসে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের একাধারে বৃষ্টিতে এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
পানিতে প্লাবিত হয়েছে বাড়িঘর ,স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট, ধর্মীয় উপসানলয়। তলিয়ে গেছে কয়েকহাজার মাছের ঘের, পুকুর।
বিলগুলোতে প্রতিদিন বাড়ছে পানি। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন বাড়ি, ঘরে প্রবেশ করছে সে পানি।
 লঘুচাপের ফলে  বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ভবদহ পাড়ের প্রায় ১ লক্ষ মানুষ।
তথ্য বলছে ২০০৫, ২০০৬, ২০১৬, ২০২০ ও  ২০২১ সালে ভবদহ অঞ্চলে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিল।
এলাকার ভুক্তভোগী মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটি, ডুমুরতলা, আন্দা, বলারাবাদ, বেদভিটা, চলিশিয়া, বারান্দী, দিঘলিয়া, দামুখালী, কপালিয়া ও দত্তগাতী গ্রাম এবং মনিরামপুর উপজেলার হাটগাছা, নেবুগাতি, পাঁচকাটিয়া, ভুলবাড়িয়া, পাচাকড়ি, সুজাতপুর, কুলটিয়া, লখাইডাঙ্গা, মহিষদিয়া, আলীপুর, পোড়াডাঙা, পদ্মনাথপুর, পাড়িয়ালী, দহাকুলাসহ প্রায় ৪০টি গ্রামের বেশিরভাগ বাড়ির আঙিনায় সাথে সাথে ঘরেও পানি উঠেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এ সব গ্রামের মানুষ।

জানা গেছে, যশোরের সদর উপজেলার আংশিক, অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার ৫৪টি বিলের পানি নিষ্কাশিত হয় শ্রী নদীর ওপর নির্মিত ভবদহ সুইচ গেট দিয়ে। এই অঞ্চলটি ভবদহ অঞ্চল নামে পরিচিত। ২০১৩ সালের পর এলাকার কোনো বিলে টিআরএম{(টাইডাল রিভার ম্যানেমেন্ট বা জোয়ারাধার ) চালু না থাকায় পলি পড়ে এলাকার পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদীর বুক উঁচু হয়ে গেছে।
ফলে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। এছাড়া এলাকার ৫/৬টি বিলের পানি নিষ্কাশনের অন্যতমপথ আমডাঙ্গা খালটি সংস্কার না করায় এবং খালের উপর নির্মিত ব্রিজটি ত্রুটি পূর্ণ হওয়ায় ওই পথে ঠিকমত পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। এই অবস্থায় বৃষ্টির পানিতে এলাকার বিলগুলো প্লাবিত হয়েছে।
বিল উপচে পানি বিলসংলগ্ন গ্রামগুলোতে প্রবেশ করছে।
চলাচলের কয়েকটি রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন ভবদহ অঞ্চলের মানুষ। রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় এলাকার কয়েকটি জায়গায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, ডুমুরতলা-বেদভিটা রোড, বলারাবাদ রোড, আন্দা-বলারাবাদ রোড, আন্দা- ডুমুরতলা রোড় এখন পানির তলে। পানি উঠেছে মশিয়াহাটি- সুন্দলী রোডের অন্তত ১০টি জাগায়। এলাকায় প্রতিদিন পানি বাড়ছে। প্রবেশ করছে ঘরের ভিতর।অভয়নগর উপজেলার ডুমুরতলা গ্রামের স্কুল শিক্ষক শিবপদ বিশ্বাস বলেন,‘ ‘গ্রামের একশ ৫৫ টি বাড়ির ৬টি বাদে সব বাড়ির উঠানে দুই থেকে তিন ফুট জল ওঠেছে। সামান্য বৃষ্টি হলিই বাড়ি ছাড়তি অবে।’
মণিরামপুর উপজেলার হরিদাশকাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিপদ ভঞ্জন পাড়ে বলেন, ‘ আমার ইউনিয়নে ২২টি গ্রাম। তারমধ্যে তিনটি গ্রামের অধিকাংশ এলাকায় এবং অপর ৪/৫টি গ্রামের বেশির ভাগ বাড়িতে জল উঠেছে।’
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সুন্দলী এলাকার সদস্য হরিনাথ বিশ্বাস বলেন,‘ এলাকার বিলগুলোতে জল থৈ থৈ করছে। অনেক মাছেরঘের ও ফসল তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে বিল উপচে জল প্রতিদিন বাড়িঘরে ঢুকছে। ইতিমধ্যে সুন্দলী এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়িতে জল ঢুকেছে।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেন,‘ কয়েকদিনের সামান্য বৃষ্টিতে ভবদহ এলাকা ডুবতে শুরু করেছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে,৫০ উদ্ধ গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কারো কারো ঘরের মধ্যে জল প্রবেশ করছে বলে শুনেছি।’ তিনি বলেন,‘ এলাকার বিলে টিআরএম (জোয়ারাধার) চালু না করলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি নেই। টিআরএম এর দাবিতে আমরা গত ৮ তারিখ ডিসি অফিসের মাধ্যমে পানি সম্পদ উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি।  দ্রুত মিটিং করে বিল কপালিয়ায় টিআরএম বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন শুরু করবো।’
জানতে চাইলে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ ব্যানার্জী বলেন,‘ সবচেয়ে বড় কথা সৃষ্টিকর্তার মার দুনিয়ার বার।এবার প্রচন্ড বৃষ্টি। বর্তমানে হরি নদীর ২ দশমিক এক কি.মি মাটি কাটার কাজ চলছে। ভবদহের ২১ ভেন্টের উপর চারটা বড় ও পাঁচটা ছোট পাম্প সবসময় চলছে।
 এরপর বৃষ্টি না হলে এবং যশোর শহরের পানি না ঢুকলে চার পাঁচ দিনের মধ্যে পাম্প দিয়ে এলাকার পানি সরিয়ে ফেলা যাবে।’
তবে বাস্তে বৃষ্টি বন্দ হলেও প্রতি নিয়ত বাড়ছে পানি,গৃহপালিত পশুর স্থান তৈরি করতে দেখা জাচ্ছে ইচু রাস্তার উপর। অনেকেই ইতি মধ্য বাড়ি ঘর ছাড়তে শুরু করেছে।
পোস্টটি শেয়ার করুনঃ