আল্লামা আব্দুল মোমিন (রহঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী।
আপডেটঃ এপ্রিল ৮, ২০২২ | ১১:৫৯
426 ভিউ
আল্লামা আব্দুল মোমিন (রহঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী।
মুর্শিদে কামিল, ফখরুল উলামা, সদরে জমিয়ত শায়খুল হাদীস আলহাজ্ব হযরত মাওলানা শায়খ আব্দুল মোমিন (শায়খে ইমামবাড়ী- পুরানগাও) আমাদের মাঝে আর নেই। তিনি
২০২০ ঈসায়ীর ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ ঘটিকায় নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। ইন্না- লিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাইহি রাজিউন। মৃত্যকালে তিনি ৪ ছেলে,২ মেয়ে সহ অসংখ্য ছাত্র, ভক্ত- মুরিদান রেখে যান। বুধবার বাদ জুহর নিজ গ্রামে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। মরহুমের ছেলে মাওলানা ইমদাদুল্লাহ মোমিন জানাযায় ইমামতি করেন। তিনি একজন সম্মানিত শহীদের গর্বিত পিতা। তাঁর এক ছেলে আফগানিস্তানে শাহাদাত বরণ করেন। তিনি উপমহাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি ছিলেন। ২০০৫ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জমিয়তের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।
জন্ম: সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলাধীন কালিয়ার ভাঙ্গা ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী পুরানগাঁও গ্রামে ১৯৩০ সালে এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার ওলী প্রকৃতির লোক ছিলেন। এলাকার একজন পরহেজগার ও মান্যবর ব্যাক্তি হিসেবে তিনি ছিলেন সুপরিচিত।মাতা গুলবাহার বিবিও একজন পরগেজগার, ও গুণবতী রমনী ছিলেন। হুজুরের দাদার নাম আহমদ, তদ্বীয় পিতা এনায়েত উল্লাহ। তাঁর পিতা মুহাম্মদ শাহ মাসুম দিদার। শাহ মাসুম দিদার ছিলেন একজন বুযুর্গ লোক। তিনি হবিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহি জামেয়া সাদিয়া রায়ধর মাদ্রাসায় কাফিয়া জামাত পর্যন্ত অধ্যয়ন করে পুনরায় ইমামবাড়ী মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে শরহে জামী জামাত পর্যন্ত অধ্যায়ন সম্পন্ন করেন।অতঃপর উচ্চ শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় গমন করেন।সেখানে ভর্তি হয়ে ৬ বছর অধ্যায়ন করেন। প্রতিটি জামাতে ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।দেওবন্দে পড়াশুনা কালীন তাঁর স্বনামধন্য উস্তাদগনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন,কুতবুল আলম আওলাদে রাসূল সাইয়্যেদ হোসাইন আহমদ মাদানী(র,) আল্লামা ইবরাহীম বলিয়াভী র.,হযরতুল আল্লামা সৈয়দ ফখরুল হাসান. হযরতুল আল্লাম মেরাজুল হক (র)। কর্মজীবনে তিনি ইমামবাড়ী মাদ্রাসায় একটানা ৮ বছর,দিনারপুর বালিধারা মাদ্রাসায় ১ বছর,হবিগঞ্জের উমেদনগর টাইটেল মাদ্রাসায় ২ বছর,বিশ্বনাথের জামিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসায় ২ বছর দরসে হাদীসের মহান পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। অতঃপর জামিয়া মাদানিয়া নবীগঞ্জ ৪ বছর মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন,এরপর ইমামবাড়ী মাদ্রাসায় পুনরায় যোগদান করে তিনি ক্রমান্বয়ে শিক্ষাসচিব, মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস পদে ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত দায়িত্ব আন্জাম দিয়ে যান। সর্বশেষ সিলেট শহরতলীর দক্ষিণ কাছ হোসাইনিয়া মাদরাসায় শায়খুল হাদীস হিসেবে ১ বছর,এরপর ২০১২ সাল থেকে বর্তমান মৃত্যু পর্যন্ত সাবেক এমপি মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত জামিয়া দারুল কুরআন সিলেটের প্রধান শায়খুল হাদীস হিসেবে ছিলেন।
রাজনীতি: ছাত্র জীবনে তিনি জমিয়তে তুলাবায়ে আরাবিয়ার সাথে যুক্ত ছিলেন।পরবর্তীতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম হবিগঞ্জ জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে অতঃপর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
২০০০সালের ২৪ জুন অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে জমিয়তের অন্যতম পৃষ্টপোষক নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালের ২০ মে জমিয়তের তৎকালীন সভাপতি মাওলানা আশরাফ আলী শায়খে বিশ্বনাথীর ইন্তেকালের পর মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন কয়েকমাস।এরপর কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে শায়খে ইমামবাড়ী কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠত কাউন্সিলে ও তিনি পুনঃ রায় সভাপতি নির্বাচিত হন। এর পর থেকে জমিয়তের কেন্দ্রীয় সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে জমিয়তের প্রোগ্রামে ইংল্যান্ড সফর করেন। তিনি সভাপতি থাকা অবস্থায়ই জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধিত হয়। সাবেক ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মুফতি মোঃ ওয়াক্কাস তার আমলের প্রথম দিকের মহাসচিব ছিলেন, ২০১৫ সালে শায়খুল হাদীস মাওলানা নুর হোছাইন কাসেমী তার মহাসচিব নির্বাচিত হন। এব্যাপারে মাওলানা নুর হোছাইন কাসেমী বলেন ‘আমি হযরতের নির্দেশে জমিয়তের মহাসচিবের দায়িত্ব নিয়েছি। ‘
মৃত্যুপর্যন্ত তিনি জমিয়তের সদর ছিলেন।
আধ্যাত্মিকতা: ১৯৫৬ সালে তাকমীল ফিল হাদীস পরীক্ষায় ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়ার বছরই ইলমুল ওহীর পাশাপাশি ইলমে তাসাউফের আলো প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে কুতবুল আলম, আওলাদে রাসুল সাইয়্যেদ হোসাইন আহমদ মাদানী (র,) এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেন। ১ বছর স্বীয় পীরের খেদমতে তাযকিয়ায়ে ক্বলবের অসাধারণ মেহনতের ফলে ১৯৫৭ সালের মে মাস (পবিত্র রমজান শরীফে) আসামের বাশকান্দিতে এতেকাফকালীন সময়ে খেলাফত লাভকরেন।মাদানী (র,) এর র্শীষ খলিফাগন বিশেষ করে ফেদায়ে মিল্লাত( র,) ও শায়খে কৌড়িয়া (র,) প্রমুখের জীবদ্বশায় তিনি সাধারণত বায়আত করতেন না।কেউ বায়আতের আগ্রহ ব্যক্তকরলে তিনি ফেদায়ে মিল্লাত বা অন্যকারো কাছে বায়আতের পরামর্শ দিতেন। ফেদায়ে মিল্লাতের ইন্তেকালের পর হযরত সায়্যিদ আরশাদ মাদানীর নিকট বাংলাদেশী উলামায়ে কেরামসহ ভক্তরা বায়আতের জন্য ভিড় করলে তিনি আমাদের শায়খ আব্দুল মোমিন (র,) এর নাম উল্লেখ করে উপস্থিত জনতাকে তাঁর কাছে রুজু করার তাগিদ দেন। এর পর থেকে তিনি বায়আত (মুরিদ) করতেন। হুজুর নিজেকে সবসময় গোপনকরে রাখতেন। খেলাফত প্রদানে ও তিনি কঠোর ছিলেন। যারফলে তাঁর খলিফার সংখ্যা তুলনা মুলক কম। হযরতের খলিফাদের মধ্যে আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমী (র),মুফতি মাহবুব উল্লাহ, মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (র), মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা আব্দুল বছীর প্রমুখ। মৃত্যুকালে হযরতের বয়স হয়েছিলো প্রায় ৯০ বছর। তিনি শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানীর খাছ ছাত্র ও খলিফা ছিলেন। আমিরে হেফাজত আল্লামা শাহ আহমদ শফী (র) তার পীরভাই। বরেণ্য এই বুযুর্গ আলেমের ইন্তেকালে দেশ বিদেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। তিনি কয়েক মাস ধরে বার্ধক্যজনিত কারনে দুর্বল হয়ে যান। কিছু দিন সিলেটের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই বুযুর্গ ২০২০ ঈসায়ীর ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ ঘটিকায় নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।মরহুমের ছেলে মাওলানা ইমদাদুল্লাহ মোমিন জানাযায় ইমামতি করেন। পরে হযরতকে নিজ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আল্লাহপাক হুজুরকে জান্নাতবাসী, করুন, আমিন