আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক; সাদুল্লাপুরে কৃষকের গম-ভুট্টা চাষের টাকা গেলো ব্যবসায়ীদের পকেটে!
মোঃ পাপুল সরকার,গাইবান্ধা প্রতিনিধি :
আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে প্রকাশ্যে বিনিয়োগ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় গম ও ভুট্টা চাষের জন্য কৃষকরা এই বিনিয়োগের টাকা পাওয়ার নিয়ম থাকলেও সেটা মানা হয়নি। বিনিয়োগের অর্থছাড় হয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নামে। এ ছাড়া এই টাকা নিতে শর্ত অনুযায়ী গ্রাহককে যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হয় সেখানেও ঘটেছে জাল-জালিয়াতির ঘটনা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, অন্যের জমির খতিয়ান নিজের নামে তৈরি করার মতো ঘটনা। শুধু তাই নয়, এই আউটলেট থেকে বিনিয়োগের ৪০ হাজার টাকা প্রত্যেকেই একটি চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করেন। অথচ টাকা ওঠানোর পর গ্রাহক কী কাজে সেই অর্থ ব্যবহার করেছে, শাখা কর্তৃক তা নিশ্চিত করা হয়নি। জমিতে গম ও ভুট্টার চাষ হয়েছে কিনা তারও কোনও প্রমাণ নেই। এমনকি যারা এই টাকা পেয়েছে তাদের সম্পর্কেও কোনও তথ্য নেই শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত আউটলেটের ম্যানেজার মো. রুবেল মিয়া। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই ছাড়া ঢালাওভাবে ব্যাংকের ঋণ বিতরণে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ গ্রাহকদের মাঝে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে প্রকাশ্যে বিনিয়োগ বিতরণ কার্যক্রমে সাদুল্লাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রাহক আবেদন করেন। গম ও ভুট্টা চাষ করেছেন এমন কৃষক পাবেন বিনিয়োগের ৪০ হাজার টাকা। আবেদনকারীর অনেকেই নতুন অ্যাকাউন্ট খোলাসহ ডিপিএস বাবদ এক হাজার টাকা করে জমা দেন। কিন্তু তাদের মধ্যে ২০ জনের নামের তালিকা তৈরি ও পরবর্তীতে ৫ জনকে দেওয়া হয় ৪০ হাজার করে টাকা। অথচ এই পাঁচ জনই এলাকার সুপরিচিত ব্যবসায়ী। যার মধ্যে এই শাখার আশপাশেই রয়েছে তিন ব্যবসায়ীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। স্থানীয় একাধিক গ্রাহকের অভিযোগ, দায়িত্বরত ম্যানেজার রুবেল মিয়া যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়ম করছেন। প্রতিনিয়ত তিনি সেবার পরিবর্তে গ্রাহকদের সঙ্গে অসদাচরণ ও হয়রানি করছেন। তিনি ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়ে পছন্দের লোকদের বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ঋণ ও প্রণোদনার সুবিধা দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, ব্যাংকঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অনেককে ডেকে নিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা এবং মাসিক ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত ডিপিএস জমা করে হয়রানি করছেন। তাই এসব অভিযোগ দ্রুত তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি গ্রাহকসহ সচেতন মহলের। অভিযোগের বিষয়ে জানতে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের সাদুল্লাপুর বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে গিয়ে কথা হয় ম্যানেজার মো. রুবেল মিয়ার সঙ্গে। তবে পরিচয় জানার পর প্রতিবেদকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে কিছুই জানা নেই। সবই করেছে হেড অফিসসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আমি শুধু ২০ জনের নামের তালিকা পাঠিয়েছি।’ তবে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের সাদুল্লাপুর আউটলেট ও পলাশবাড়ীর শাখা ব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম।