আশাশুনিতে পাতানো নিয়োগ পরীক্ষা সন্ধার পরে নেওয়ায় জনগনের তোপের মুখে খাতা না দেখেই পালিয়ে গেলেন নিয়োগ কর্তারা
আশাশুনি উপজেলার কাকবাসিয়া বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাতানো নিয়োগ পরীক্ষার সন্ধার পরে নেওয়ায় জনগনের তোপের মুখে খাতা না দেখেই পালিয়ে গেলেন নিয়োগ কর্তারা
স্টাফ রিপোর্টার:
সন্ধার পরে পরীক্ষা নেওয়ায় জনগনের তোপের মুখে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাকবাসিয়া বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫টি পদে পাতানো নিয়োগ পরীক্ষার খাতা না দেখেই পালিয়ে গেছেন নিয়োগ কর্তারা।
সরেজমিনে সাতক্ষীরা সিটি কলেজে গেলে মামুন, জুয়েল, ইদ্রিসসহ একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গতকাল রাত ৮ টা ৪০ মিনিটের দিকে সাতক্ষীরা সিটি কলেজে ওই ঘটনা ঘটে। আশাশুনি উপজেলার কাকবাসিয়া বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫টি পদে নিয়োগ পরীক্ষা দিতে প্রার্থীরা প্রবেশপত্রের সময় বিকাল ৩ টার আগেই সাতক্ষীরা সিটি কলেজে আসেন। তবে ওই স্কুলের সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও ডিজির ২ জন প্রতিনিধি বিকাল ৩ টার পরিবর্তে পরীক্ষা শুরু করেন বিকাল ৫ টা ৪০ মিনিটে। পরীক্ষায় অংশ নেন নিরাপত্তা কর্মী পদে ৭ জন, অফিষ সহায়ক পদে ৭ জন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে ৫ জন, ল্যাব এসিস্টান্ট পদে ৫ জন, আয়া পদে ৭ জন। ১ ঘন্টার পরীক্ষা শেষে সন্ধা সাড়ে সাতটার দিকে নিয়োগ পরীক্ষার খাতা শুরুর চেষ্টাকালে স্থানীয় ও আশাশুনি থেকে আগত জনগনের তোপের মুখে পড়েন নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ এবং কাকবাসিয়া বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি সিহাবউদ্দীন, আশাশুনি উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সিহাবউদ্দীনের স্ত্রী পারভীন সুলতানা, ডিজি প্রতিনিধি সাতক্ষীরা সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্রতিনিধি হাবিবুল্লাহ ও তালা সরকারি গার্লস স্কুলের শিক্ষক অলক সরকার। পরবর্তীতে রাত ৮ টা ৪০ মিনিটের দিকে জনগনের তোপের মুুখে পরীক্ষার খাতা না দেখেই খাতা সিলগালা করে যে যার মত পালিয়ে যান নিয়োগ কর্তারা।
আশাশুনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি সভাপতিকে আজকে(শনিবার) পরীক্ষা নিতে নিষেধ করেছিলাম। তবে তিনি আমার কথা শোনেননি। তিনি নিজের ইচ্ছামতো সবকিছু করেছেন।
সন্ধার পর পরীক্ষা নেওয়া যায় কিনা এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে অনেক কিছু একটু মেনে নিতে হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিজির প্রতিনিধি সাতক্ষীরা সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিকাল ৪ টা বেজে যাওয়ায় আমি যেতে পারিনি তবে তার আগে আমি হাবিবুল্লাহ নামের একজন শিক্ষককে আামরে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছিলাম। বিকাল সাড়ে ৫ টা বেজে যাওয়ায় আমি তাকে মাগরিবের আগেই কোন পেপারস এ স্বাক্ষর না করে চলে আসতে বলেছিলাম। আর সন্ধাার পরে পরীক্ষা না নেওয়ার জন্য সভাপতিকে বলেছিলাম। মাগরিবের পরে হাবিবুল্লাহ চলে না আসায় আমি তাকে ফোন দিলে তিনি আমাকে বলেছেন সভাপতি সিহাবউদ্দীনসহ সংশ্লিষ্ঠরা তাকে আটকে রেখেছেন। আসতে দিচ্ছেননা। আমি আমার প্রতিনিধিকে খাতা না দেখে সিলগালা করে খাতা নিয়ে আসতে বলেছি।
পালিয়ে যাওয়ার সময় জানতে চাইলে ডিজি প্রতিনিধি সাতক্ষীরা সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্রতিনিধি হাবিবুল্লাহ বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে তবে খাতা দেখা হয়নি। খাতা সিলগালা করে আমরা নিয়ে যাচ্ছি।
এসময় সভাপতি সিহাবউদ্দীন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও ডিজির প্রতিনিধি অলক সরকার কোন কথা বলেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাকবাসিয়া বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১জন ল্যাব সহকারি, ১জন অফিস সহায়ক, ১জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ১জন আয়া ও ১জন নিরাপত্তা কর্মী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ওই ৫ পদে নিয়োগের জন্য গতকাল বিকাল ৪ টায় সাতক্ষীরা সিটি কলেজ পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরীক্ষা নেওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয় বিকাল তিনটা। তবে নিয়োগ পরীক্ষার কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা আগে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র পৌঁছে দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়েছে ১২ ঘন্টা আগে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, কাকবাসিয়া বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি সিহাবউদ্দীন ও তার স্ত্রী ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিলে ৫ টি পদে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা নিয়োগ বানিজ্যের উদ্দেশ্যে সাতক্ষীরা সিটি কলেজকে কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করেন। ইতিমধ্যে তিনি ওই ৫ পদে ৫জনকে নিয়োগ দানের উদ্দেশ্যে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে সন্ধার পর নিয়োগ সম্পন্নের চেষ্টা করেন। এছাড়া নিয়োগ প্রদানের কথা সভাপতি সিহাবউদ্দীন অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলে বলে আশাশুনির আনুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেছেন।
আনুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস বলেন, চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করে টাকা নেওয়ায় টাকা ফেরতের দাবীতে সভাপতির বিরুদ্ধে রেক্সোনা খাতুন ও মনিরুজ্জামান গ্রাম আদালতে অভিযোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা শাহজান কবিরের কাছে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।