কারিগরি ত্রুটি কাটিয়ে উৎপাদনে আসার ১০ দিনের মাথায় ফের বন্ধ হয়ে গেল রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। কয়লার মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক উৎপাদনে থাকা দুটি ইউনিটের একটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে আজ রোববার ভোর থেকে। কয়লা আসার পর আগামী ৮ আগস্ট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুনরায় চালু করা যাবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর আগেও কয়লা সংকটে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়েছিল।

আজ ভোর ৩টা ৩৮ মিনিটে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাণিজ্যিক উৎপাদনে থাকা প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী সরদার।

ওয়াজেদ আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কয়লার মজুত নেই। এ জন্য আজ রাত ৩টা ৩৮ মিনিটের দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের তথ্যমতে, বাংলাদেশ-ভারতের অর্থায়নে নির্মিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ থাকায় জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে ৬৬০ মেগাওয়াট।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এমন সময় বন্ধ হয়ে গেল, যখন তাপমাত্রার পারদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট থাকলেও সর্বোচ্চ উৎপাদন করা যাচ্ছে সাড়ে ১২ হাজারের মতো। ফলে পিক আওয়ারে বিদ্যুতের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট। রামপাল বন্ধ থাকার কারণে আড়াই হাজার মেগাওয়াট ঘাটতির মধ্যেও নতুন করে সরবরাহ কমেছে রামপাল থেকে আসা ৬৬০ মেগাওয়াট।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রামপাল বন্ধ হওয়ার জেরে গ্রামাঞ্চলে বাড়তে পারে লোডশেডিং। রাজধানী ঢাকা ছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ধরে লোডশেট হচ্ছে বলে জানান বিপিডিপির কর্মকর্তারা।

গতকাল রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রথম ইউনিট বন্ধ হওয়ার আগে সকাল ৭টার দিকে ৫০১ মেগাওয়াট পর্যন্ত সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। রাত ১২টার দিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন নেমে আসে ৩৮২ মেগাওয়াটে। পরে ধীরে ধীরে বিদ্যুতের লোড কমিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রাত ৩টা ৩৮ মিনিটে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের হিসাব সংরক্ষণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ বি এম বদরুদ্দোজা খান  বলেন, কয়লা সংকটের কারণে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ আছে।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুনরায় কবে উৎপাদনে আসবে জানতে চাইলে বিপিডিবি পরিচালক (জনসংযোগ) শামীম হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আগামী মাসের ৮ তারিখের দিকে রামপাল পুনরায় উৎপাদনে আসার সম্ভাবনা আছে। ৫৫ হাজার টন কয়লার একটি জাহাজের জন্য ইতিমধ্যে ঋণপত্র খোলার প্রক্রিয়া চালু আছে। ৮ আগস্টের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুনরায় চালু করা যাবে।

এর আগে ১৬ জুলাই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র কারিগরি সমস্যার কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তখন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বয়লারের গ্ল্যান্ডফিল লিকেজ হওয়ায় এটি ট্রিপ করে যায়। পরে পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর ২১ জুলাই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুনরায় উৎপাদনে আসে।

এরও আগে গত ৩০ জুন রাত ৮টা ৪৬ মিনিটে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে ইলেকট্রিক্যাল জেনারেটর ইউনিট প্রোটেকশনে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ ছিল। ১০ দিন বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকার পর ১০ জুলাই সন্ধ্যা ৭টায় পুনরায় উৎপাদনে ফেরে। ইলেকট্রিক্যাল জেনারেটর ইউনিট প্রোটেকশনে ত্রুটি সারিয়ে ১০ জুলাই উৎপাদনে আসার ৪ দিনের মাথায় ১৩ জুলাই রাত ১০টা ২৯ মিনিটে কারিগরি সমস্যার কারণে আবারও রামপাল ট্রিপ করে যায়। এর জেরে বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল প্রায় ৯ ঘণ্টা।

ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুটি ইউনিট আছে, যার প্রতিটি ৬৬০ মেগাওয়াটের। দুটি ইউনিটের মধ্যে প্রথম ইউনিটটি গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসে। ৬৬০ মেগাওয়াটের দ্বিতীয় ইউনিট এখনো বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসেনি। জানা গেছে, আগামী সেপ্টেম্বরের দিকে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হতে পারে।

বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি প্রথম দফায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় কয়লা সংকটে পড়ে। মূলত, ডলারের সংকটে ঋণপত্র খুলতে না পারার জেরে কয়লার মজুত শেষ হয়ে গেলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটের কারণে এরপর গত ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় উৎপাদন বন্ধ ছিল এই বিদ্যুৎকেন্দ্র। ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আসার পর গত ১৭ মে এই কেন্দ্রে পুনরায় উৎপাদন শুরু হয়।

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ