ঘেরসিন্ডিকেটের হাত থেকে রক্ষা পেতে চায় বিল কেদারিয়ার কৃষকরা
অভয়নগর প্রতিনিধিঃ
‘কৃষকের জমি কৃষকের হাতে তুলে দাও। কাঁচি যার জমি তার।’-
এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে যশোরের অভয়নগর ও মণিরামপুর
উপজেলার সীমান্ত এলাকা সুজাতপুর গ্রামে শুরু হয়েছে
ঘের বিরোধী আন্দোলন। বিল কেদারিয়ার দক্ষিণপাশে অবস্থিত
‘সুজাতপুর পল্লীমঙ্গল ধান্য ও মৎসঘের’ এর কৃষকরা তাঁদের জমি
আর বাইরের জোতদার ব্যাবসায়ীদের কাছে হারি(লীজ) দিতে চান না।
সমবায় ভিত্তিতে নিজেদের জমিতে নিজেরাই ফসল ও মাছ চাষ করতে
চান তারা।
গত রোববার বিকাল পাঁচটার দিকে সুজাতপুর গ্রামসহ দুই
উপজেলার প্রায় দুইশত কৃষক ও কৃষাণী সুজাতপুর গ্রামের
রাধাকৃষ্ণ সেবাশ্রমের সামনে জড়ো হয়ে এক মিটিংয়ের মাধ্যমে
তাদের এ প্রত্যয়ের কথা জানান। এর আগে সেখানে এক সংবাদ
সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন
অধ্যাপক অনিল কুমার বিশ্বাস। গত একসপ্তাহ আগে শতাধিক
কৃষক যশোর-৫ ও যশোর-৪ আসনের দুই এমপির সাথে দেখা করে
তাদেরকে পাঁচ শতাধিক কৃষকের স্বাক্ষর সম্বলিত স্মারক লিপি
প্রদান করে বাইরের কেউ যেন তাদের জমি জোরপূর্বক দখল করে
ঘেরব্যবসা না করতে পারে সে ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করেন।
লিখিত বক্তব্য আর বক্তাদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, সুজাতপুর পল্লীমঙ্গল
ধান্য ও মৎস্য ঘের দুই উপজেলার সীমান্ত এলাকায় বিল কেদারিয়ার
দক্ষিণপাশে অবস্থিত। সেখানে একহাজার ২০০ বিঘা(৪২ শতকে
বিঘা) জমি রয়েছে। আর আসেপাশের প্রায় ১০টি গ্রামের পাঁচ
শতাধিক কৃষক রয়েছে। ঘেরটি গত বাংলা ১৪২৫ বঙ্গাব্দ হতে ১৪৩০
বঙ্গাব্দ পর্যন্ত ছয় বছরের জন্য লীজ নেওয়ার জন্য ষোলটি শর্তে বিলের
কৃষকদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হন অভয়নগর উপজেলার গুয়াখোলা
গ্রামের মেঘ নাথ সিংহের ছেলে ব্যবসায়ী শ্যামল কুমার সিংহ।
কিন্তু ওই ব্যবসায়ী শুরু থেকেই অধিকাংশ শর্ত অমান্য করে এলাকার
গরীব, অসহায়, প্রান্তিক ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো সাথে
অমানবিক ব্যবহার করছেন। শর্ত ভঙ্গ করে কয়েকজন কৃষকের হারি
একেব্রাই না দেওয়া, প্রথম চার বছর বিঘাপ্রতি দুইহাজার টাকা
হারির টাকা কম দেওয়া, ব্যাংক লোনের জন্য ফসলি জমিকে বিজনেস
শ্রেণি দেখানোয় খাজনা বৃদ্ধি, খাস জমির কৃষদের হারি না
দেওয়া, ঘেরে লবনজল তুলে ফসল ও বিছালীর ক্ষতিসাধন করাসহ ছয় বছরে
ওই ব্যবসায়ী কৃষকদের সাত কোটি ৬০ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকার
ক্ষতিসাধন করেছেন। ফলে কৃষকরা আর শ্যামল কুমার সিংহের সাথে
ঘেরের লীজ নবায়ন করতে চান না। কৃষকরা অভিযোগ করেন, শ্যামল
দুইবছর আগে থেকে ঘের ম্যানেজার ও স্থানীয় কিছু দালালের মাধ্যমে
গরীব কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে
ঘেরের নতুন ডিড করেছেন। কিন্তু কৃষকরা জীবন দিতে রাজি তবুও
ওই ব্যবসায়ীকে আর ঘের লীজ দিতে চান না।
মিটিংয়ে বক্তারা অভিযোগ করেন, শর্ত ভঙ্গ করে ঘের ব্যাবসায়ী
স্থানীয় কতিপয় দালাল ও মাস্তান পুষে তাদের মাধ্যমে সরকারি ভেড়িতে
কৃষকের যাতায়াত বন্ধ করা, বিলের মধ্যে থাকা ২০০ কুয়া নষ্ট করা,
পার্শ্ববর্তি ১৫/২০টি ছোট ঘের দখল, মদ,গাজা ফেনসিডিল দিয়ে
উঠতি বয়সি যুবসমাজকে ধ্বংস ও কিষোর গ্যাং সৃষ্টি করা,
হাঁস-মুরগী মেরে ফেলাসহ নানাবিধ অপকর্মে লিপ্ত থাকেন। বীর
মুক্তিযোদ্ধা পরিমল কান্তি বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায়
বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক অনিল কুমার বিশ্বাস, মশিয়াহাটি উচ্চ
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (অবঃ) সুকৃতি মন্ডল, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকI
কর্মকর্তা আদিত্য মন্ডল, কৃষি কর্মকর্তা(অবঃ) অশোক মল্লিক,
স্থানীয় ইউপি মেম্বার পরিমল কান্তি ধর, কৃষক খগেন বিশ্বাস,
প্রশান্ত বিশ্বাস রাজকুমার বিশ্বাস, সোমনাথ বিশ্বাস প্রমুখ।
অধ্যাপক অনিল কুমার বিশ্বাস বলেন, শ্যামল বাবু বিলের কৃষকদের
আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতি করেছেন। দাদাল পুষে কৃষকদেরসাথে
অমানবিক আচরণ করেছেন। তাই কৃষকরা আর তাকে ঘের লীজ দিতে
চান না।
জানতে চাইলে ঘের মালিক শ্যামল কুমার সিংহ সকল অভিযোগ
অস্বীকার করে বলেন, আমি যদি কৃষকের টাকা কম দিই এবং তাদের
আর্থিকভাবে ক্ষতিসাধন করি তবে ওখানকার হাজারো কৃষক কি
আমাকে ছেড়ে দিবে? তিনি বলেন , গত দেড়মাস আগে আমি
পূনরায় নতুন করে কৃষকদের সাথে চুক্তিকরে ঘেরের মেয়াদ
বাড়িয়েছি। সেখানে অধিকাংশ কৃষক সই করেছেন।