নিজস্ব প্রতিনিধি : ঝিনাইদহ ৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজম আনারের হত্যার পরিকল্পনা হয় আগেই। ভাগ বাটোয়ারার দ্বন্দ্বে পুরনো বন্ধু আখতারুজ্জামান শাহিন হত্যার পরিকল্পনা করে।

জানা যায়, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ৫ কোটি টাকার চুক্তি হয় চরমপন্থী নেতা আমানউল্লার সঙ্গে। এই আমানকে নিয়ে শাহিন কলকাতায় যায় ৩০শে এপ্রিল। কলকাতায় সংসদ সদস্য আনার হত্যার ছক কষে ১০ এপ্রিল দেশে ফিরে আসে শাহিন। বাকিরা আনারকে হত্যা ও মর্ধ গুমের পর ফেরেন দেশে।

এছাড়াও জানা যায়, সংসদ সদস্য আনার হত্যার ঘটনায় ঢাকা থেকে আমানউল্লাহ, ফয়সাল ও শাহিনের বান্ধবী শিলাসতি রহমনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলশ। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সংসদ সদস্য আনারকে হত্যা করা হয়েছে ১৩ই মে, এর আগে তিনি ১২ই মে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যান। কৌশলে তাকে কলকাতার নিউ টাউনের একটি অভিজত এলাকায় ভাড়া করা ফ্ল্যাটে ডেকে নেওয়া হয়। ১৩ই মে নিউটাউনের ওই ফ্ল্যাটে একাই যান আনার। আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন আমানউল্লাহ, ফয়সাল, মোস্তাফিজ, সিয়াম, জিহাদ ও শিলাসতি।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছে ওই ফ্ল্যাটে যাওয়ার পর শাহিনের টাকার জন্য চাপ দেয় আমানউল্লাহ ও তার সহযোগীরা এক পর্যায়ে আনারের গলায় চাপাতি ধরে আমানউল্লাহ, এ নিয়ে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় এমপি আনারকে। শ্বাসরোধ করে হত্যার পর আমানউল্লাহ ওই খবর বাংলাদেশে অবস্থান করা শাহীনকে জানায়। তখন শাহিন ওই লাশ গুম করার নির্দেশ দেন। আমানউল্লাহসহ গ্রেফতারকৃত তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, শাহিনের নির্দেশ পেয়ে আমান এমপি আনারের লাশটি পেটে টুকরো টুকরো করে। এরপর বাইরে থেকে কিনে আনা সাদা পলিথিনে ভরে ঢুকানো হয় পৃথক দুটি ট্রলিতে। লাশের টুকরোগুলো ব্যাগে ঢোকানোর পর বাইরে থেকে আনা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ওই ফ্ল্যাটের ফ্লোর পরিষ্কার করে ফেলেন তারা।

এমপি আনারকে ১৩ই মে হত্যা করা হলেও তার মৃতদেহের টুকরো ভর্তি প্রথম ট্রলিটি ওই বাসা থেকে সরানো হয় ১৪ই মে।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন,‌ লাশের টুকরো ভর্তি একটি ট্রলি ওই বাসা থেকে বের করা হয় ১৪ই মে। বাসার বাইরে নিয়ে পাশের একটি শপিং মলের সামনে সিএম কে এই ট্রলি তুলে দেয়া হয়।সিয়াম একটি গাড়িতে উঠে কিছুদূর যাওয়ার পর ব্যাগ নিয়ে নেমে যায়। এরপর এই ব্যাগ কোথায় নিয়ে গেছে তা আর জানা যায়নি। আরেকটা ব্যাগ রেখেই ১৫ই মে আমান ও শাহিনের বান্ধবী সিলাসতি বিমান যোগে ঢাকায় চলে আসে। অপর ট্রলি ব্যাগটি মোস্তাফিজ ও ফয়সালসহ অন্যরা সরিয়ে ফেলেন। ডিবি জানিয়েছে ১৭ই মে তারেক, মোস্তাফিজুল ঢাকায় আসে এবং ১৮ই মে আসে ফয়সাল। সিয়াম এবং ফয়সাল অবৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছিলো। তাদের অবস্থান শনাকদের কাজ চলছে।

এমপি আনার হত্যার পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান শাহিন এবং বাস্তবায়নকারী আমানউল্লাহ সম্পর্কে ডিবি জানিয়েছেন তিনি সংসদ সদস্যের ছোটবেলার বন্ধু। সোনার কারবার নিয়ে শাহীন ও আনারের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিলো, সেই দ্বন্দ্বের জেরে একসময়ের চরমপন্থী নেতা আমানউল্লাহকে ভাড়া করে। চুক্তি হয় ৫ কোটি টাকার। আমানুল্লাহ একসময় পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ছিলেন। আমানুল্লাহ এক মামলায় ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত জেল খাটেন। পরবর্তীতে আরেক মামলায় ২০০৭ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জেল খাটেন দুটোই ছিলো হত্যা মামলা।

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ