তালা শালিখা গুচ্ছ গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ
জৌষ্ঠ প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ১২৪নং শালিখা গুচ্ছ গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা পারভীনের বিরুদ্ধে আবারও বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বিগত অর্থবছরে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করে উপজেলা শিক্ষা অফিস। কিন্তু শিক্ষকদের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের হস্তক্ষেপে তদন্তকারী শিক্ষা কর্মকর্তা দূর্ণীতির অভিযোগ এড়িয়ে অভিযোগ ধামাচাঁপা দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং ম্যানেজিং কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে দফায় দফায় প্রধান শিক্ষকের অসদাচরণ, হুংকার এবং অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় এলাকার মানুষের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষক ফরিদা পারভীনের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীতে গত রোববার (৩০ জুলাই) উপজেলা শিক্ষা অফিসার’র নিকট অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এবিষয়ে শালিখা গুচ্ছ গ্রামের শাহ হাকিম, ডবলু সরদার ও জসিম সরদার সহ একাধিক ব্যক্তি জানান, ১২৪নং শালিখা গুচ্ছ গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে ফরিদা পারভীন যোগদান করার পর বিদ্যালয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার অবনতি হয়েছে। প্রধান শিক্ষক স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে বিদ্যালয় চালাচ্ছেন। তিনি অধিকাংশ দিন সকাল ১০টার দিকে বিদ্যালয়ে এসে বিভিন্ন অযুহাত দিয়ে বেলা ৩টার আগেই বাড়িতে চলে যান। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কোনও অভিভাবক আসলে তাদের সাথে অসদাচারণ এবং হুমকি পর্যন্ত দিয়ে বলেন- “বিদ্যালয় এই ভাবে চলবে, পছন্দ না হলে বাচ্চা অন্যত্র নিয়ে যাও”।
অভিভাবকরা বলেন,বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি থাকলেও পারিবারিক, শিক্ষক সিন্ডিকেট এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটে প্রধান শিক্ষক কাউকে তোয়াক্কা না করে দূর্নীতি, অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে অত্র বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামত বাবদ ২ লক্ষ বরাদ্দে টাকার অর্ধেক আত্মসাৎ করেন। সেসময় এলাকার মানুষ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলে ঘটনার তদন্ত হয়। তদন্তকালে অভিযোগের সত্যতা প্রমানিত হলেও একটি শিক্ষক সিন্ডিকেট এবং নিজের ক্ষমতার দাপটে তদন্তকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে অভিযোগ হাওয়া হয়ে যায়। এরপর থেকে প্রধান শিক্ষক বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এবং সেই সাথে অভিযোগকারীর সন্তানদের সাথে রুঢ় আচরণ করে আসছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজ প্রভাষক বলেন, এলাকার শিক্ষানুরাগী কোনও ব্যক্তি ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়ন এবং দূর্নীতির বিরুদ্ধে কিছু বললে প্রধান শিক্ষকের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ সহ হুংকার শুনতে হয়। এখন অপদাস্থ হওয়ার ভয়ে এলাকার কেউ ওই স্কুলের বিষয়ে কোনও কথা বলতে যান না। যার ফলে, বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নষ্ট হবার সাথে এখানে দূর্নীতির আখড়া তৈরি হয়েছে। আর এজন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সহ শিক্ষকদের একটি অবৈধ সিন্ডিকেট দায়ী বলে তিনি জানান।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ইমরান সরদার জানান,ফরিদা পারভীন প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকে বিদ্যালয়ে দূর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা এখন স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। বিগত বছরের অর্থ আত্মসাতের ধারাবাহিকতায় ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বিদ্যালয়ের জরুরী মেরামত বাবদ ২ লক্ষ টাকা এবং মাননীয় সংসদ সদস্য কর্তৃক আরও ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ফরিদা পারভীন মাত্র ৮০ হাজার টাকা বিদ্যালয়ের জন্য খরচ করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এঘটনার প্রতিকার পেতে অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দাবী জানান।
উপজেলা প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা কর্মকর্তা মো:সাইফুল ইসলাম জানান,এবিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।