ধুলিহর এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতায় আউশ ধান পানির নিচেঃ মানুষ ও গোখাদ্যের তীব্র সংকটাসহ জনদূর্ভোগ চরমে।পানিবাহিত রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা।

মোঃ আরশাদ আলী সাতক্ষীরা থেকে।
প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও বৃষ্টি হলেই সাতক্ষীরা সদরের কয়েকটি ইউনিয়নের ২৫/৩০ টি গ্রামে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির কারণে সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গা এলাকা হতে শুরু করে ধুলিহর,ব্রহ্মরাজ পুর ও ফিংড়ী ইউনিয়নের২৫/৩০টি গ্রামে স্থায়ী জলবদ্ধতায় ধুলিহর ইউনিয়নের দামারপোতা,বাগডাঙ্গা,বড়দল,জিয়ালা, গোবিন্দপুর,নাথপাড়া, কাজিরবাসা, তালতলা,বালুইগাছা,ধুলিহর সানাপাড়া,জাহানাবাজ, কোমরপুর,দরবাস্তিয়া, চাঁদপুর গ্রামের অধিকাংশ জায়গায় জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রুপ নিয়ে স্থায়ী জলবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

এছাড়াও ফিংড়ী ইউনিয়নের ফয়জুল্যাপুর,বালিথা, শিমুল বাড়ীয়া,এল্লারচর,ফিংড়ী, গাভা,ব্যাংদহ,জোড়দিয়া,গোবরদাড়ী,সুলতান পুর,মজলিস পুর,হাবাসপুর ও কুলতিয়াসহ ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের মাছখোলা,নুনগোলা,রামচন্দ্র পুর,চেলার ডাঙ্গা, বড়খামার,মেল্লেকপাড়া,উমরাপাড়া বাঁধন ডাঙ্গাসহ সাতক্ষীরা পৌরসভার ৫ টা গ্রাম স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার হয়।
গত ১৫/২০ বছর যাবত বেতনা নদীর তীরে অবস্থিত এই এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ, গবাদিপশুসহ বিভিন্ন গৃহপালিত প্রাণী।

প্রতি বছর জুলাই মাস আসতে না আসতেই সামান্য বৃষ্টি হলেই সাতক্ষীরার বেতনা পাড়ে অবস্থিত এসব গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যায়।এসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পানিবন্দি এসব মানুষের মধ্যে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন পানি বাহিত রোগ বালাই। রাস্তাঘাট,স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ডুবে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয় ।
গত কয়েকদিন আগের টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট ভয়াবহ স্থায়ী জলবদ্ধতার কারনে এসব এলাকার শতশত একর জমিতে আমন ধান চাষ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও কৃষকরা কিছু জমিতে আউশ ধান চাষ করলেও ভারী বর্ষনের ফলে ধানগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে একাধিক কৃষকরা জানিয়েছেন।

সাতক্ষীরা পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার কারণে পৌরসভার পানি ধুলিহর ও ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বেতনা নদীতে পানি নিষ্কাশন হতে না পারায় এসব এলাকার মানুষকে স্থায়ী জলাবদ্ধতা শিকার হতে হয় বলে জানান ধুলিহর ইউনিয়নের বড়দল গ্রামের মেম্বর মোঃ এনামূল হক খোকন।এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বেতনা নদী খনন ও এসব এলাকার খাল খননের দাবীতে জেলা পানি নিষ্কাসন ও বাস্তবায়ন কমিটি, জেলা নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন গত এক যুগ ধরে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। স্থানীয় দৈনিক পত্রদূত সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রতি বছর জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষয়ক্ষতি ও মানুষের দূর্বিসহ ভোগান্তির বর্ননা দিয়ে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ করার ফলে সরকার ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেতনা নদীর খনন কাজ এবছর শুরু করলেও তা কবে নাগাদ শেষ হবে তার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ধীর গতিতে চলছে নদী খননের কাজ ফলে জলাবদ্ধতার শিকার এসব এলাকার মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জলাবদ্ধতার কারণে এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট সব পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জনদূর্ভোগে অসহনীয় হয়ে পড়েছে বেতনা পাড়ের মানুষ। আবার অনেকেই বেতনা নদীর খনন কাজ দেখে আশার আলো না দেখে হতাশ হয়ে সাতক্ষীরা প্রাণ সায়ের খালের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছেন।ইতিমধ্যে ফিংড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ লুৎফর রহমান এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।এসব এলাকার খালে নেটপাটা অপসারণ করতে চিরুনি অভিযান চালিয়ে আসছে। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে নেটপাটা অপসারণ করতে গত কয়েক দিন পূর্বে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এলাকায় মাইকিং করা হয়। তারপরও কিছু অসাধু লোকজন নেটপাটা দিয়ে মাছ ধরে আসছে বলে একাধিক ব্যক্তি এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন। ধুলিহর গোবিন্দপুর গ্রামের মিডিয়াকর্মী মেহেদী হাসান শিমুল জানান- গত কয়েক বছর ধরে জলাবদ্ধতায় আমার বসতবাড়ি সহ এলাকার অধিকাংশ বসতঘরের মধ্যে পানি ওঠায় আমরা অসহনীয় দূর্ভোগের মধ্যে মানবেতর জীবন যাপন করছি। অথচ শুধু পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে প্রতি বছর এসব এলাকার অসংখ্য রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে শত শত মাছের ঘেরসহ পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে যাওয়ায় অসংখ্য মৎস্যচাষীর মাথায় হাত উঠে যায়।
এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে প্রতি বছর কৃষকরা আমন ধান চাষ করতে না পারায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে জানান ফয়জুল্যাপুর গ্রামের কৃষক অবিনাশ মন্ডল।
এছাড়া পর্যাপ্ত বৃষ্টিতে রাস্তা ঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় এলাকায় জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
এলাকার বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে স্কুলের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

জলাবদ্ধতার কারণে এলাকায় বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। স্থানীয় ধুলিহর গ্রামের গবাদিপশু চাষী মুরাদ হোসেন জানান – প্রবল বর্ষনে বিচলী ও খড়গাদার ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় গোখাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এসব গবাদিপশু নিয়ে চাষীরা বিপাকে পড়েছে।

প্রতিবছর জলাবদ্ধতার কারণে ধুলিহর ইউনিয়নের বালুইগাছা গ্রামের পালপাড়ায় মৃৎশিল্প হাড়ি , পাতিল,কলস,টালিসহ বিভিন্ন জিনিস পত্র তৈরি করার মাটি
এবং কারখানা পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে ঐতিহ্য বাহী এ শিল্প আজ বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে বলে জানান বালুইগাছা গ্রামের সাংবাদিক মোঃ শাহাদাৎ হোসেন বাবু ।সচেতন এলাকাবাসী এলাকার স্থায়ী জলবদ্ধতা নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য যথাযথ কতৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ