নড়াইলের মধুমতি সেতু চালুর পর একের পর এক উন্নয়ন
উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে:
নড়াইলের মধুমতি সেতু চালুর পর একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর পর চালু হয় মধুমতি সেতু। এর একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে নড়াইলের আর্থ সামাজিক অবস্থা। শিল্পায়নের ছোঁয়া লেগেছে চিত্রাপারের ছোট্ট এই জেলা শহরে। প্রথমবারের মতো রেললাইন চালুর কাজও এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। সড়ক প্রস্তুত, অর্থনৈতিক জোনসহ আরও প্রকল্পে আশাবাদী এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ীরা। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান,
নড়াইলের মধুমতি সেতু চালুর পর একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে নড়াইলের আর্থ সামাজিক অবস্থা। শিল্পায়নের ছোঁয়া লেগেছে চিত্রাপারের ছোট্ট এই জেলা শহরে। প্রথমবারের মতো রেললাইন চালুর কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। সড়ক প্রস্তুত, অর্থনৈতিক জোনসহ আরও প্রকল্পে আশাবাদী এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ীরা।
পদ্মা সেতু চালুর পর গত বছর ১০ অক্টোবর মধুমতি নদীর ওপর চালু হয় দেশের প্রথম ৬ লেনের সেতু। আর এ সেতু চালুর পর পরই অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে দেশের ছোট জেলা শহর নড়াইলের। বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর থেকে পণ্য আমদানিতে এ সেতু ব্যবহার করে বিভিন্ন পণ্য দ্রুততম সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে রাজধানীতে।
সেতু হওয়ার পর পরিবহনের চাপ বাড়ায় কালনা থেকে যশোর পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার সড়কের চলছে প্রশস্তকরণ কাজ। যা পরবর্তীতে ৬ লেনে উন্নীত করা হবে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার এমন উন্নতিতে নড়াইলের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে শিল্প প্রতিষ্ঠানের। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সেতুর পাশেই ৩০০ একর জমিতে ইকোনমিক জোন তৈরির জন্য এরইমধ্যে স্থান নির্ধারণও চূড়ান্ত হয়েছে। পরিকল্পনায় রয়েছে বিসিক শিল্প নগরী প্রতিষ্ঠারও। পদ্মা সেতুর রেল লিংকে নড়াইল অংশের কাজও চলছে দ্রুত গতিতে। এতে প্রথমবারের মতো রেলে চড়ার অপেক্ষায় নড়াইলবাসী। এসব উন্নয়নে সন্তুষ্টির হাসি চিত্রাপারের মানুষের মুখে।
রেললাইন প্রকল্প
পদ্মা সেতু রেল লিংক ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত পৌঁছাবে নড়াইল হয়ে। মধুমতি নদীর ওপর তৈরি হচ্ছে রেললাইনের জন্য দ্বিতীয় সেতু। এরই মধ্যে সেতুর ৮০ শতাংশ কাজও শেষ। এছাড়া নড়াইলের বিভিন্ন স্থানে রেল লিংকের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। নড়াইল জেলায় এ রেললাইনের তিনটি স্টেশন হবে।
এসব স্টেশন নির্মাণ কাজও শেষের পথে। বিভিন্ন স্থানে রেললাইন বসানোর জন্য পাথর বসানোসহ অন্যান্য কাজও চলছে। এ লাইনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো নড়াইলের মানুষ রেলে চড়তে পারবেন। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে প্রকল্পের নড়াইল অংশের কাজ শেষ হবে।
মধুমতি নদীর উপর তৈরি হচ্ছে রেল লাইনের জন্য দ্বিতীয় সেতু।
পদ্মা রেললাইন প্রকল্পের সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার মো. নাসির খান বলেন, আমাদের চারটি ডিভিশন এখানে কাজ করছে। আমরা আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে আমাদের অংশের কাজ শেষ করবো। অন্য ডিভিশন এরপর এসে পাথর বসিয়ে ও রেলের স্লিপার বসানোর কাজ করবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে।
সড়ক প্রশস্ত করণ
মধুমতি সেতু চালুর পর বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর থেকে আমদানি করা পণ্য এ সেতু পার হয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দ্রুততম সময়ে পৌঁছে যাবে। এছাড়া যশোর হয়ে যাত্রীবাহী বাসও এ সেতু পার হয়ে রাজধানী যাচ্ছে। সব মিলিয়ে সেতু সংলগ্ন বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
অন্যদিকে সড়কটিও বেশ সরু। এসব বিবেচনায় সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প হাতে নেয় সড়ক বিভাগ। ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত দীর্ঘ ১২৯ কিলোমিটার সড়ক ৬ লেনে উন্নীত করা হবে।
প্রকল্পটি একনেকে ওঠার অপেক্ষায়। প্রকল্পটি পাস হতে সময় লাগায় সড়ক বিভাগ আপাতত সড়কের চাপ সামলানোর জন্য কালনা থেকে যশোর পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণে কাজ শুরু করেছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ চলছে।
যানবাহনের চাপ বাড়ায় চলছে সড়ক প্রশস্তের কাজ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আসলাম আলী বলেন, মধুমতি সেতুর জন্যই এ সড়কটিতে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ ও নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত পদ্মা এক্সপ্রেসওয়ের মতো একই ধরনের এক্সপ্রেসওয়ে হবে।
১২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি যাচাই শেষে এখন একনেকে ওঠার অপেক্ষায়। সড়কটি এশিয়ান হাইওয়ের অংশ হওয়ায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রকল্পটি বড় হওয়ায় একটু সময় লাগছে। এই সময়টাতে নড়াইলের সড়কটিকে আপাতত কিছুটা প্রশস্ত করা হচ্ছে। নড়াইলের কালনা থেকে যশোর পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করা হবে। কাজ অনেকটাই শেষ হয়ে গিয়েছে। এতে আপাতত সমাধান মিলবে বলে জানান তিনি।
ইকোনমিক জোন
মধুমতি সেতু চালুর পরপরই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়তে থাকে ছোট্ট এই জেলা শহরে। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানও গড়ে ওঠে। তবে ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে এক জায়গায় অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য ইকোনোমকি জোন তৈরির প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মধুমতি সেতুর খুব কাছেই ৩০০ একর জায়গা নির্ধারণ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন শুধু বাস্তবায়নের অপেক্ষা।
নড়াইল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. হাসানুজ্জামান বলেন, দেশের বড় বড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নড়াইলে ফাঁকা জায়গা খুঁজছে, শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য। অনেকেই আবার সড়কের আশেপাশে জায়গা কেনারও চেষ্টা করছে। তবে আমাদের দাবি ছিল সব প্রতিষ্ঠানকে একটি নির্ধারিত স্থান দেয়া। অবশেষে আমাদের সে দাবি বাস্তবায়ন হয়েছে। এরই মধ্যে স্থান চূড়ান্ত হয়েছে।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী দিনে নড়াইল দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র হবে। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে।