প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি সাতক্ষীরা জেলা শাখার পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ
আহবায়ক ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি সাতক্ষীরা জেলা শাখার পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ
শিক্ষকদের একাংশের কাউন্সিল অধিবেশন বয়কট
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি সাতক্ষীরা জেলা শাখার পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে জেলা আহবায়ক কমিটির আহবায়ক আরিফুজ্জামান কাকন ও সদস্য সচিব বিধান চন্দ্র মন্ডলের বিরুদ্ধে। এদিকে পকেট কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে কাউন্সিল অধিবেশন বয়কট করে চলে যান শিক্ষকদের একাংশ।
শনিবার(২৯ জুলাই) সকাল ১১ টায় কলারোয়াস্থ প্রাথমিক শিক্ষক মিলনায়তনে যেয়ে দেখা যায়, অনুষ্ঠানের শুরুতে আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব বিধান চন্দ্র মন্ডল মাইকে বক্তব্য দিচ্ছেন। এসময় যেসকল শিক্ষক কউন্সিলর না তাদেরকে বাইরে বের হয়ে যাওযার জন্য বলছেন। তখন শিক্ষকদের একাংশ এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য শুনবো বলে এসেছি। আপনারা আগে বললেতো আমরা এখানে আসতাম না। আমরা এখানে থাকি। কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হলে আমরা যারা কাউন্সিলর না তারা চলে যাবো। একথা শোনার পর বিধান চন্দ্র মন্ডল যখন আবারও শিক্ষকদের চলে যেতে বলেন তখন সভাপতি প্রার্থী ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মিলনায়তন থেকে অন্যান্য শিক্ষকদের নিয়ে বের হয়ে যান। এরপর আহবায়ক কমিটির আহবায়ক এসে বেরিয়ে যাওয়া শিক্ষকদের ভেতরে প্রবেশের অনুরোধ জানালে মনিরুজ্জামানসহ অন্যান্য শিক্ষকরা ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হলে কোন প্রকার ভোট ছাড়াই আহবায়ক কমিটির আহবায়ক ও সদস্য সচিব ২২ সদস্য বিশিষ্ঠ একটি কমিটির নামের তালিকা বের করেন এবং বলেন এই শিক্ষকরা প্রার্থী হতে আগ্রহী। এখন আপনারা হাত তুলে তাদের সমর্থন দেবেন। এই কথা শুনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমি একজন প্রার্থী। আমিও ভোট করতে চাই। আপনারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পদক নির্বাচনের জন্য গোপন ব্যালট বা গোপন চিরকুটের ব্যবস্থা করেন। এখানে কোন হাত উঠানো হবে না।’ এসব বিষয় শোনার পরও যখন আহবায়ক কমিটি শিক্ষকদের একাংশের কোন কথায় কর্ণপাত করেননি তখন মনিরুজ্জামানসহ শিক্ষকদের একাংশ কাউন্সিল বয়কট করে ‘ভূয়া, ভূয়া’ স্লোগান দিয়ে মিলনায়তন ত্যাগ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেন, ‘নির্বাচন হবে শুনে আমরা এতদূর গিয়েছিলাম। তবে যেয়ে দেখি কোন নির্বাচন হয়নি। আগে থেকে নির্ধারিত শিক্ষকদের নামের তালিকা করে বিভিন্ন পদে বসিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আহবায়ক কাকন স্যার স্বচ্ছভাবে কমিটি গঠন করতে চাইলেও সদস্য সচিব সেটি চাননি। সদস্য সচিব নিজের পকেটের লোকদের নিয়ে ওই কমিটি তৈরি করেছেন। তার কারণেই আজ সাতক্ষীরার শিক্ষকরা বিভক্ত হয়ে গেল। তিনিই এই পকেট কমিটি গঠনের নাটের গুরু।’
তালা উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, ‘কাউন্সিল অধিবেশনে আমাদের ডেকে এনে অপমান করা হয়েছে। আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির বক্তব্য শ্রবন করার জন্য এখানে এসেছিলাম। আলোচনা শেষে আমাদের বের হয়ে যেতে বললে আমরা বের হয়ে যেতাম। তবে তার আগেই আমাদের বাইরে বের হয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। আহবায়ক কমিটি অন্যান্য উপজেলার কতিপয় ব্যক্তির সাথে আঁতাত করে কাউন্সিল অধিবেশন জেলা সদরে না করে কলারোয়ায় করেছেন। আমরা এই পাতানো কমিটিকে ধিক্কার জানাই এবং যে পকেট কমিটি তারা করবেন সেই কমিটিকে বয়কট করার ঘোষণা দিলাম।’
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি বলেন, ‘একটি কুচক্রিমহল বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি সাতক্ষীরা জেলা শাখাকে ধ্বংসের পায়তারা চালাচ্ছেন। তারা পরিকল্পিতভাবে একটি পকেট কমিটি করার জন্য নানা নাটক মঞ্চস্থ করে শেষ পর্যন্ত সেই পকেট কমিটি ঘোষণা করে গেলেন আহবায়ক আরিফুজ্জামান কাকন ও সদস্য সচিব বিধান চন্দ্র মন্ডল। তারা দুইজন আর্থিকসহ নানারকম সুবিধা নিয়ে পঙ্কজ বর্মনকে সভাপতি ও তারেক সাইফুল্লাহকে সাধারণ সম্পাদক করে ২২ সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটি ঘোষণা করেছেন। আমরা এই পকেট কমিটি মানিনা।’
এ ব্যাপারে জানার জন্য বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি সাতক্ষীরা জেলা শাখার সদস্য সচিব বিধান চন্দ্র মন্ডলের কাছে কল করলে তিনি অসুস্থ বলে ফোনের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
তবে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি সাতক্ষীরা জেলা শাখার আহবায়ক আরিফুজ্জামান কাকন এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যে পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা। আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি গঠন করেছি। এখানে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।’