মোঃ জাহিদ হোসেন, দিনাজপুর প্রতিনিধি||

দিনাজপুরের পার্বতীপুরের পাটিকাঘাট সুলতানপুর আদর্শ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম- দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন নিয়োগপ্রার্থী,অভিভাবক, এলাকাবাসী ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষকগণ।তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে আদালতে মামলাও করেছেন চাকুরী প্রত্যাশীরা।অভিযোগকারীরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য পরিণত করেছেন। আর এই অনিয়ম দুর্নীতি ও জালিয়াতির নেতৃত্বে রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান শিক্ষক বর্তমান সভাপতি আতাউর রহমান ও বর্তমান প্রধান শিক্ষক মাহফুজার রহমান।তারা আরো বলছেন, প্রতিষ্ঠানটিতে এককথায় একপ্রকার নৈরাজ্য চলছে।কোন নীতিমালা কিংবা নিয়ম-কানুন নয়,দুই ব্যক্তির মর্জিতেই চলছে সবকিছু। গত ২৪ মার্চ সরেজমিনে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কিছু বেহাল চিত্র ফুটে উঠেছে।শিক্ষকরা আসছেন খেয়াল খুশি মতো।সকাল ১১টা পেরিয়ে গেলেও বেশ কিছু শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকের উপস্থিতি দেখা যায়নি।এসময় নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। প্রধান শিক্ষক অসুস্থতা জনিত কারণে ছুটিতে থাকায় কথা হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক মজিবুর রহমানের সাথে।ভুয়া নিয়োগ ও নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে তিনি কথা না বললেও শিক্ষকদের দেরিতে উপস্থিতি ও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম প্রসঙ্গে বলেন,পূর্বের দিনের ঝড়ের কারণে এমনটা হয়েছে।উল্লেখ্য,সেদিন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ৬২জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অস্থায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নৈশ্য প্রহরী কর্তৃক অত্র বিদ্যালয়ের ২৭সেট বেঞ্চ চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান,সে করেছে এটি সত্য নয়।এবিষয়ে আমরা থানায় অভিযোগ করেছি। জাল সনদে চাকুরীর একটি অডিট হয় মন্ত্রণালয় থেকে।সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষিকা দেলোয়ারা জানান,মিনিস্ট্রি অডিটে বিষয়টি সমাধান করে নিয়েছেন তিনি।এই অভিযোগটি সত্য নয় বলেও তিনি জানান। অভিযোগ উঠেছে,একজন শিক্ষককে সহ-প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন থেকে তার কাছে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।ম্যানেজিং কমিটির বেশিরভাগ মিটিং সভাপতির ফুলবাড়ীর বাড়িতে হয় বলে একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগকারীরা সবচেয়ে বড় যে অভিযোগটি করেছেন”প্রতিষ্ঠানটি মঞ্জুরী নবায়ন”ফেল করেও কিভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করলো সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক?বিষয়টা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মঞ্জুরী নবায়ন ফেল করলে কোনভাবেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে না। এদিকে ওই প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি বিগত ২০২২ সালে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েও তিনজন প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে গড়িমসি করেছে।ওই তিন প্রার্থীর একজন রুবেল অভিযোগ করে বলেন,তারা তিনজন মিলে ওই প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে ১৫লক্ষ টাকা দিয়েছেন।অথচ তাদের কাছে এখন দাবি করা হয়েছে ৩০লক্ষ টাকা।প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দাবি পূরণ না করায় তাদেরকে হয়রান করা হচ্ছে বলে এমনটি দাবী করছেন তারা। এদিকে দশ বছর পূর্বে পাঁচজন প্রার্থী ভোকেশনাল শাখায় ভূয়া নিয়োগের শিকার হয়েছেন।ভুয়া নিয় প্রাপ্তরা হলেন পুতুল,আমান,দেলোয়ার, বাবুল ও নুরুজ্জামান।এদের কাছ থেকে কয়েক লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেন তারা।এখন সেই টাকা চাইতে গিয়ে ভয়ের মধ্যে বসবাস করছেন পরিবারগুলো। ভোকেশনাল শাখাটির অনুমোদন না পাওয়ায় শাখাটি বন্ধ হলেও ভোকেশনাল এর নামে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি আজও। ভুক্তভোগীরা জানান,এই চক্রটি তাদেরকে বিভিন্ন লোভনীয় ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে নানান তালবাহানা শুরু করেছে।পরবর্তীতে তাদের টাকা ফেরত দিবে বলে আশ্বাস দিলেও এযাবত কোন টাকা ফেরত দেয়া হয়নি। তাদের কেউ-কেউ জমি বিক্রি করে,জমি বন্ধক রেখে,গহনা বিক্রি করে এই টাকাগুলি দিয়েছেন।দীর্ঘদিন বেগার খেটেও চাকরি যখন হয়নি তখন টাকা ফেরত চেয়েও টাকা না পেয়ে ওইসব পরিবারগুলো এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। টিউশন ফি নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন,দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আমাদেরকে টিউশন ফি দেওয়া হয় না। আমাদের এই টিউশন ফি গুলিও তারা আত্মসাৎ করছেন।এবিষয়ে কথা হয় বীরেন্দ্র রায় নামে একজন শিক্ষকের সাথে।তিনি জানান,সবার সিদ্ধান্ত নিয়ে টিউশন ফি গুলো অত্র বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয়।এটা সত্য টিউশন ফি কোন শিক্ষককে দেয়া হয় না। এসব অভিযোগ নিয়ে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজার রহমানের সঙ্গে কথা বলতে তার বাসায় গেলে তিনি অসুস্থ থাকায় কথা বলতে পারেননি। অনুরূপভাবে অত্র বিদ্যালয়ের সভাপতি আতাউর রহমানের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি শুধু সময় ক্ষেপন করেছেন,কিন্তু কোন প্রশ্নের উত্তর দেননি। এই অবহেলিত অঞ্চলের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে ১৯৯২সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।প্রতিষ্ঠাটি ২০১০ সাল পর্যন্ত আশানুরুপ ফলাফল করলেও এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটির ফলাফল আশানুরূপ হচ্ছিল না।শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও শিক্ষার মান নিম্নের দিকে।এই পরিস্থিতিতে এই অঞ্চলের সুশীল সমাজের মানুষ,অত্র প্রতিষ্ঠানের অবসরে যাওয়া কিছু কর্মচারী ও প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান,যেন অনতিবিলম্বে প্রতিষ্ঠানটির হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সভাপতি নির্বাচিত করা হোক এবং প্রধান শিক্ষক নিয়োগও খুবই জরুরী।ইতিমধ্যে ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবুও তারা জোরপূর্বক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রাখার বিভিন্ন পথ অবলম্বন করছে।প্রধান শিক্ষক মাহফুজার রহমান দুর্নীতিবাজ সভাপতি আতাউর রহমানকে আবারো পকেট সভাপতি করবার জোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।পাশাপাশি তারা বর্তমান প্রধান শিক্ষকেরও পদত্যাগ দাবি করেন।এগুলো বাস্তবায়ন হলে তবেই ফিরে আসতে পারে প্রতিষ্ঠানটির হারানো ঐতি

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ