সাতক্ষীরায় অবৈধ ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি,
সাতক্ষীরায় অবৈধ ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি,
প্রতারিত ও সর্বশান্ত হচ্ছেন অসহায় সাধারণ মানুষ
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
ব্যাঙের ছাতার মতো সাতক্ষীরায় গড়ে উঠছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। তবে অধিকাংশেরই নেই যথাযথ অনুমোদন। মানা হচ্ছেনা কোনো নিয়মনীতি। নিয়মানুযায়ী বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালুর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিতে হয়। পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই চালু করতে হয় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য থাকতে হয় প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, যন্ত্রপাতি।
শুধু তাই নয়, ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালুর জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হয়। প্রতি অর্থবছরে নবায়ন করতে হয় নিবন্ধন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানা হয় না এসব নিয়ম কানুন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই সাতক্ষীরা শহরসহ সাত উপজেলায় চলছে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক। ফলে দিনেরপর দিন দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত ও সর্বশান্ত হচ্ছেন অসহায় মানুষ। আর লাভবান হচ্ছেন কতিপয় দালাল ও অসাধু ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরার সাত উপজেলায় ২৫০টির অধিক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত অধিকাংশ নবায়ন করেননি। এছাড়া অনলাইনে কোন কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন করেছেন। তবে ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ২ টা, এসডি হাসপাতাল, ডক্টরস ল্যাবসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ভিজিট করে অনাপত্তিপত্র দিলেও অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এখনও ভিজিট ও করেননি স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্মকর্তারা। সাতক্ষীরা জেলা সদর হাসপাতাল, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশপাশেই রয়েছে অনেক বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান।
বিশেষ করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সামনে ও সিভিল সার্জন অফিসের নাকের ডগায় এসব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক গড়ে উঠলেও চোখে দেখেননা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশতেই মানা হয় না কোনো নিয়মকানুন। অনেকের নেই যথাযথ লাইসেন্সও। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের আবেদন করেই শুরু করেছে কার্যক্রম। আবার যাদের লাইসেন্স আছে তারাও মানছেন না নিয়মকানুন। অভিযোগ রয়েছে, সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সাথে আঁতাত করেই চলেছে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এছাড়া সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার ও কর্মচারীরা অনেকাংশে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে জড়িত থাকায় কোন নিয়মকানুন মানা লাগেনা এইসব প্রতিষ্ঠানের।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, সরেজমিনে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চারিপাশে গড়ে ওঠা ক্রিস্টাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সুন্দরবন হাসপাতাল, সাতক্ষীরা ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স, স্বপ্ন ক্লিনিক, স্বপ্না ক্লিনিক, মোহিনী ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সততা ক্লিনিক, আনোয়ারা মেমোরিয়াল ক্লিনিক, বুশরা হাসপাতাল, পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সাতক্ষীরা ট্রমা সেন্টার, শেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সোনালী ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আল নূর হাসপাতাল, গাইনি হাসপাতাল, সানজানা নার্সিং হোম, নিরাময় ক্লিনিক, নাজমুল ক্লিনিক, একতা হাসপাতাল, ইটাগাছার ন্যাশনাল হাসপাতাল, পোস্ট অফিস মোড়ের সিটি ক্লিনিক, ফারহানা ক্লিনিক, কলারোয়ার মুন্না ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আরোগ্য ক্লিনিক, কলারোয়া ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পাটকেলঘাটার লোকনাথ নার্সিং হোম, তালা সার্জিকাল ক্লিনিক, মা ক্লিনিক, আশাশুনির রাবেয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বুধহাটার মা সার্জিকাল ক্লিনিক, নিবেদিতা ক্লিনিক, সোনার বাংলা ক্লিনিক, কালিগঞ্জের কালিগঞ্জ সার্জিকাল ক্লিনিক, আহসানিয়া সার্জিকাল, শ্যামনগরের রিডা প্রাইমারী হাসপাতাল, সুন্দরবন, ক্লিনিক, এপোলো হাসপাতাল, মডার্ণ ক্লিনিক, সুন্দরবন নাসিং হোম, নগর প্রাইভেট হাসপাতাল, বংশীপুর নার্সিং হোম, আনিকা ক্লিনিক, সেবা নাসীং হোম, শামিমা ক্লিনিক, আল শেফা ক্লিনিক, ফার্নান্ড হাসপাতালের বেশিরভাগেরই নেই রোগ নির্ণয়ের মানসম্মত যন্ত্রপাতি, অপারেশন থিয়েটার, পরীক্ষাগার, প্রশিক্ষিত সেবিকা ও ল্যাব টেকনোলজিস্ট। দালালদের মাধ্যমে ভাগিয়ে আনা হয় রোগী। বিভিন্ন রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নাম দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙানো থাকলেও নিয়মিত রোগী দেখতে বসেননা তারা। ধার করা খন্ডকালীন চিকিৎসক দিয়ে চলছে জটিল অস্ত্রোপচারসহ নানা চিকিৎসা। অনুমোদনহীন এসব হাসপাতালে চিকিৎসার নামে ব্যবসা, প্রতারণা, রোগী ভোগান্তির অভিযোগ উঠছে হরহামেশাই। এছাড়াও এসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে প্রায় সময়ই ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগও উঠে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ক্লিনিকের পরিচালক বলেন, যেসব শর্ত মেনে লাইসেন্স করাতে হয় তার অধিকাংশ শর্তই বেসরকারি হাসপাতালগুলো মানে না। আর মানাও সম্ভবনা। শর্ত মেনে ক্লিনিক ও হাসপাতালের আবেদন করাও প্রায় অসম্ভব। আর আবেদনের পর একটি মহলকে ম্যানেজ করতে না পারলে বছরের পর বছরও ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শনে আসবেননা স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তারা।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. শেখ সুফিয়ান রোস্তম বলেন, অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, জরিমানাও করা হয়েছে অনেককে।