মোঃ রাব্বি স্টাফ রিপোর্টার :
নরসিংদীর রায়পুরায় হেযবুত তওহীদের নারীকর্মীদের উপর বর্বরোচিত হামলা, অপহরণ ও হত্যাচেষ্টাকারীদের প্রধান আসামি রুবেল মিয়াকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার (২২ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
জানা যায়, ঈদের দ্বিতীয় দিন গত মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে নরসিংদীর রায়পুরা থানার হাসনাবাদ বাজার এলাকায় দৈনিক দেশেরপত্র পত্রিকা বিক্রি করাকালীন তিন নারী বিক্রয় প্রতিনিধির উপর হামলা, অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা চালায় গ্রেফতার হওয়া উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের সানাবাদ এলাকার খোরশেদ মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়া ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। প্রকাশ্য দিবালোকে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে নরসিংদী। ঘটনার পর গুরুতর আহত জোবায়দা খাতুনের স্বামী মোকশেদ আলী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক ঘটনার সত্যতা পেয়ে শুক্রবার (২১ জুন) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে এসআই আমিনুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্সসহ অভিযান চালিয়ে রায়পুরা হাসনাবাদ বাজার থেকে ঘটনার মূল হোতা রুবেল মিয়াকে গ্রেফতার করে। পরে ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৫/৩০৬/৩০৭/৩৫৪/৪২৭/৫০৬ (২) ধারায় মামলা রুজু হয় যার নং -২২, তারিখ ২২ জুন ২০২৪ ইং। এর আগে গ্রেফতারের পর ফাঁড়িতে অবস্থানকালে আসামির আত্মীয়-স্বজনরা অনেক নাটকীয়তার জন্ম দেয়। তারা নানানভাবে আসামিকে ছাড়িয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা করে কিন্তু পুলিশের অনমনীয় এবং দৃঢ় মনোভাবের কারণে ব্যর্থ হয় তারা।
মামলার এজাহার সূত্রে জনা যায়, ঘটনার দিন তিন নারী বিক্রয় প্রতিনিধি জোবায়দা খাতুন, শান্তনা আক্তার নিপা ও আয়শা আক্তার খাদিজা ঘটনাস্থল হাসনাবাদ বাজারে পত্রিকা বিক্রি করছিল। এসময় আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের সানাবাদ এলাকার রুবেল মিয়া নামে এক ব্যক্তি নারী বিক্রয়কর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বাজার এলাকা ত্যাগ করতে বলে। বিক্রয়কর্মীরা তার প্রতিবাদ করলে রাসেল তাদের হাত থেকে পত্রিকা ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। এরপর তাদের টেনে-হিঁচড়ে একটি অটোরিকশায় উঠানোর চেষ্টা করলে তারা হাত ছাড়িয়ে নেমে পড়ে। এসময় নারী সদস্যদের পরনের কাপড়-চোপড় ধরে টানা-হেঁচড়া করে শ্লীলতাহানী ঘটায়। পরে রুবেল মিয়ার নির্দেশে তার সাঙ্গপাঙ্গরা তাদের অপহরণের উদ্দেশ্যে একটি প্রাইভেটকার নিয়ে এসে তাদের প্রাইভেটকারে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু নারী কর্মীদের প্রতিরোধের মুখে অপহরণ করতে ব্যর্থ হয়ে তারা দিকবিদিক শূন্য হয়ে হকস্টিক ও লাঠি দিয়ে তাদের উপর এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা তাদের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে, কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। উপর্জুপরি হামলায় তিন জন নারী কর্মীই আহত হন। রুবেল মিয়া বাঁশের লাঠি দিয়ে জোবায়দা খাতুনের মাথায় আঘাত করলে তার মাথা ফেটে রক্ত ঝড়তে থাকে। এসময় শান্তনা আক্তার নিপার মোবাইল ফোনটি আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলে সন্ত্রাসীরা। পরে অত্র এলাকায় পত্রিকা নিয়ে ঢুকলে জানে মেরে ফেলবে এমন হুমকি দিয়ে স্থান ত্যাগ করে সন্ত্রাসীরা। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। জোবায়দা খাতুনের মাথায় ৫টি সেলাই দেওয়া হয়। আয়শা আক্তার খাদিজা ও শান্তনা আক্তার নিপাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
প্রকাশ্য দিবালোকে নারীদের উপর এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে ও হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে পরদিন বুধবার (১৯ জুন) বিকাল ৪টায় নরসিংদী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নরসিংদী জেলা হেযবুত তওহীদ। এর আগে বিকাল ৩টায় হেযবুত তওহীদের নরসিংদী জেলা সভাপতি ফারুক মিয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) শামসুল আরেফীন মহোদয়ের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপিতে নারীদের উপর বর্বরোচিত হামলাকারী উগ্রবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বিক্ষুব্ধ জনতা। মানববন্ধন শেষে একটি র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বের হয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
এ ঘটনায় জোবায়দা আক্তারের স্বামী মোকসেদ আলী বাদী হয়ে রায়পুরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদী মোকশেদ আলী জানান, পুলিশ প্রশাসন যদি অপরাধীদের ধরার ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থানে থাকেন তবে কোন আসামি পার পাবে না। এবং এই ঘটনায় সন্ত্রাসীদের কাছে একটা শক্ত বার্তা যাবে, এদেশে তারা যা খুশি তা করতে পারবে না।
মামলার আইও আমিনুল ইসলাম জানান, অন্যান্য আসামিদেরকেও গ্রেফতারে জোর তৎপরতা চলছে।

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ