ইউআরসি ইন্সট্রাক্টরের স্বেচ্ছাচারিতা প্রশিক্ষক নিয়োগ দ্বন্দে ইউআরসি সেন্টার বন্ধ, ক্ষোভ শিক্ষকদের মাঝে
জাকির হোসেন নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
শুধু প্রশিক্ষক নিয়োগ দ্বন্দে নওগাঁ জেলায় চলমান প্রাথমিকের শিক্ষাক্রম বিস্তরণ প্রশিক্ষন হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। ডেপুটেশন প্রাপ্ত প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষনার্থীরা হয়রানী হয়ে ফিরে গেছেন নিজ কর্মস্থলে। এমন ঘটনা ঘটেছে নিয়ামতপুর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে (ইউআরসি)। জানা গেছে পিটিআই ইন্সটিটিউট থেকে সরকারের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে প্রশিক্ষক নিয়োগ দেয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) প্রাাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় উপজেলা পর্যায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের তিন দিনব্যাপী শিক্ষাক্রম বিস্তরণ প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষনে নিয়ামতপুরে ১৯ টি ব্যাচ প্রশিক্ষন পাবে। প্রতিটি ব্যাচের বিপরীতে বরাদ্দ বিভাজন করে দিয়েছে অধিদপ্তর। এই প্রশিক্ষনে প্রশিক্ষকদের (শিক্ষক) জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট থেকে মোটা অংকের টাকা বাঁচিয়ে নি¤œমানের প্রশিক্ষন উপকরণ প্রদান ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে পিটিআই এর সুপাডেন্ট এর নাম ভাঙ্গিয়ে চতুর্থ ব্যাচের প্রশিক্ষন বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছে নিয়ামতপুর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের (ইউআরসি) ইন্সট্রাক্টর তমা চৌধুরীর বিরুদ্ধে। আরডিপিপি এর বাজেট থেকে জানায়, প্রতি শিক্ষানার্থীর জন্য তথ্যপত্র, একটি কলম, একটি প্যাড ও মেকার্ডের জন্য বরাদ্দ ৫০০ টাকা ও প্রতি প্রশিক্ষনার্থীর জন্য একটি ব্যাগের বরাদ্দ ৫০০ টাকা। প্রশিক্ষন ব্যাচ হবে ১৯ টি। প্রতিটি ব্যাচে প্রশিক্ষানার্থী অংশ নিবে ৩০জন করে। এতে মোট প্রশিক্ষানার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৭০ জন। সরে জমিনে দেখা যায়, প্রেস থেকে ছাপানো একটি তথ্যপত্র যার সর্বোচ্চ মূল্য ১১০-১২০ টাকা, একটি কলমের মূল্য ১০ টাকা, একটি নেমকার্ডের খরচ ১০ টাকা, প্যাডের মূল্য ২৫-৩০ টাকা এবং প্রশিক্ষনার্থীদের জন্য একটি করে ব্যাগ যার আনুমানিক মূল্য ২৫০-৩০০ টাকা। যা সর্বোমোট দাঁড়ায় ৪৭০ টাকা। কিন্তু এসব উপকরণ বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১০০০টাকা। তাহলে প্রতিটি প্রশিক্ষনার্থীর বাজেট থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে প্রায় ৫০০ টাকা। ১৯ টি ব্যাচে প্রশিক্ষনার্থী থাকবে ৫৭০জন। এভাবে ৫৭০ জনের বরাদ্দ থেকে গায়েব করা হবে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। এরি মধ্যে ৩টি ব্যাচের প্রশিক্ষন শেষ হয়েছে। প্রশিক্ষন নিতে আসা ভাদরন্ড লক্ষীতাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল হক বলেন, আমরা যথা সময়ে প্রশিক্ষন গ্রহনের উদ্দেশ্যে ইউআরসি সেন্টারে আসি। এসি দেখি, সেন্টারের সকল কার্যক্রম বন্ধ। অথচ আমরা শিক্ষা অফিসের ডেপুটেশন চিঠি নিয়ে ইউআরসি আসি। যেহেতু আমাদের ডেপুটেশন সেহেতু ৯ থেকে ৪.৩০ মিনিট পর্যন্ত আমরা অবস্থান করি। এ সময়ে আমাদের রেজিষ্ট্রেশন করার কোন সুযোগ দেয়া হয়নি। দিন শেষে বিকাল ৫টার দিকে আমাদের প্রশিক্ষন না করিয়েই সকাল-বিকালের স্বাক্ষর নেন ইউআরসি কর্মকর্তা। প্রশিক্ষক হিসাবে ডেপুটেশন প্রাপ্ত সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রনজিত কুমার শিকদার জানান, “ আমি ও আমার সহকর্মী হান্নান শাহ যথা সময়ে ইউআরসি সেন্টারে উপস্থিত হই। আমাদের দেখে ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর তমা চৌধুরী বলেন দু’জন কেন। তখন দু’জনের ডেপুটেশন চিঠি দেখায়। এতে তিনি রাগান্বিত হন ও আমাদের একজনকে অংশ নিতে বলেন। কিন্তু তার এ দাবী নীতিমালা বহির্ভূত হওয়ায় তার প্রস্তাবে আমরা রাজি না হলে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে চতুর্থ ব্যাচের প্রশিক্ষন বন্ধ ঘোষনা করেন। এমন ঘটনায় নিয়ামতপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল আলম জানান, নিয়ম মেনেই আমরা ডেপুটেশনপত্র দিয়ে প্রশিক্ষক হিসাবে ২জন সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও ৩০ জন শিক্ষককে ইউআরসি সেন্টারে পাঠায়। তিনি বলেন, বিধি মোতাবেক একজন প্রশিক্ষক পর পর দুই ব্যাচের অধিক প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। ইতিমধ্যে ৩টি ব্যাচের দায়িত্ব পালন করেছে ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর তমা চৌধুরী। এ কারণে বিধি মোতাবেক চর্তুথ ব্যাচের প্রশিক্ষক নেওয়া হয় দুই জন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে। তিনি প্রশিক্ষক হিসাবে থাকতে পারবেননা তাই হয়তো বন্ধ করেছেন প্রশিক্ষন। ইউআরসির এমন কার্যকলাপে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশিক্ষণে ব্যাঘাত ঘটেছে, শিক্ষকদের মাঝে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। এমন ঘটনায় বিষয়টি আমার উর্ধতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। এমন ঘটনায় ইউআরসি কর্মকর্তা তমা চৌধুরী বলেন, তিনি বলেন, এই ট্রেনিংয়ে মোট দুজন প্রশিক্ষক থাকবেন। কিন্তু শিক্ষা অফিসার দুজন প্রশিক্ষক নিজে থেকে দেওয়ার কারণেই ট্রেনিং বন্ধ করা হয়েছে। প্রশিক্ষণের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা অফিস থেকে একজন ও ইউআরসি থেকে আরেকজন প্রশিক্ষক থাকবে। শিক্ষা অফিস নিয়মের ব্যাত্যয় ঘটানোয় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। বিধি মোতাবেক প্রশিক্ষন পরিচালিত হবে। প্রশিক্ষণ কেন বন্ধ হলো তা তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহণ করা হবে।