প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা
প্রবাদে আছে ‘ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে।’ এই প্রবাদটি আরো একবার প্রমাণ করলেন সাতক্ষীরা বিআরটি এর মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট ওবাইদুর রহমান। চুয়াডাঙ্গা বিআরটিএ অফিসে থাকাকালীন সময়ে যেমন একটি দালাল সিন্ডিকেট তৈরী করে সীমাহীন অনিয়ম ও দূর্ণীতি করতেন সেই চরিত্র তিনি এখনও বদলাতে পারেননি। ইতিমধ্যে সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসে যোগদান করেই ঠিক চুয়াডাঙ্গার মতো সাতক্ষীরায় গড়ে তুলেছেন একটি দালাল সিন্ডিকেট। চুয়াডাঙ্গার মতো আবারও শুরু করেছেন অর্থবানিজ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা বিআরটিএ অফিসে থাকাকালীন সময়ে বিআরটিএর মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট ওবাইদুর রহমান ড্রাইভিংলাইসেন্সসহ বিআরটিএর নানা কাজের জন্য গড়ে তোলেন একটি দালাল সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিদিন হাতিয়ে নিতেন হাজার হাজার টাকা। বিষয়টি নিয়ে সে সময় বিভিন্ন সংবাদপত্রে ওবাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই সংবাদের জের ধরে চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিক সনজু আহমেদ ও আব্দুল্লাহ হককে মারধোর করেন বিআরটিএর মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট ওবাইদুর রহমান ও তার সঙ্গীরা। এরপর তাকে শাস্তিমূলক বদলী করা হয় সাতক্ষীরায়। তবে সাতক্ষীরায় আসার আগে ওবাইদুর রহমান কাজ করে দেওয়ার নাম করে প্রায় ২ ডজন লোকের কাছ থেকে যে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন তা এখনও ফেরত দেননি। ফলে ওবাইদুর রহমানকে দেওয়া টাকা ফেরত পেতে চুয়াডাঙ্গার গ্রাহকরা বারবার ওবাইদুলের মোবাইলে কল দিলে তিনি বুঝতে পেরে কল রিসিভ করছেননা। পরে নম্বর ব্লাক লিস্টে রাখছেন।
এ বিষয়ে সহায়তা চেয়ে চুয়াডাঙ্গার বাপ্পা কর্মকার, সম্মৃতি, রোমন কুমার, সোহানুর রহমান, নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন ভূক্তভূগী বলেন,  পরিপূর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্স করে দেওয়ার কথা বলে ৮ হাজার করে টাকা নিয়ে চুয়াডাঙ্গা বিআরটিএ থেকে আমাদের লার্নার করিয়ে দেন ওবাইদুর রহমান। ৬ মাস আগে নানা অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগে তাকে সাতক্ষীরায় বদলী করে দেন। এরপর থেকে তার আর কোন যোগাযোগ আমরা পায়নি। ফোন দিলে রিসিভ করেননা। নাম্বার ব্লাক লিস্টে রাখেন। এখন আমাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হয়নি এমনকি টাকাও ফেরত দিচ্ছেননা। আমাদের এখানের প্রায় ২ ডজন গ্রাহকের কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তিনি সাতক্ষীরায় চলে গেছেন।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা এলাকার ওই ভূক্তভূগীদের তথ্যের ভিত্তিতে গত কয়েকদিনে সাতক্ষীরা বিআরটিএর মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট ওবাইদুর রহমানের নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে গতকাল সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরা বিআরটিএর অফিসে যেয়ে ওবাইদুর রহমানের দেখা মেলে। এসময় তার কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি টাকা নেওয়ার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে বলেন, আমি কাজ করার জন্য টাকা নিয়েছিলাম। যেকোনভাবে আমি তাদের কাজ করে দেবো। হঠাৎ বদলী হয়ে সাতক্ষীরায় চলে আসায় তাদের কাজটা করা হয়নি।’ আপনিতো ৬ মাস আগে এসেছেন তাহলে এতো দিনেও কেন তাদের সাথে যোগাযোগ করে টাকা ফেরত দেননি বা তাদের কল কেন রিসিভ করেননা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তাদের সাথে কথা বলেম টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। আপনাদের এ বিষয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে।’
এদিকে বিআরটিএ অফিস থেকে বের হয়ে ওবাইদুর রহমানের ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, ওবাইদুর রহমান এখানে যোগদানের পর থেকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন দালালের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। তিনি একটি দালাল সিন্ডিকেট তৈরীর জন্য জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। তার দ্বারা চুয়াডাঙ্গার মতো সাতক্ষীরা বিআরটিএর ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে।
সাতক্ষীরা বিআরটিএ এর সহকারী পরিচালক কে এম মাহবুব কবির বলেন, ‘ওবাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে এসকল বিষয়ে অভিযোগের তদন্ত চলছে। আমাদের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করছেন। সুতরাং এসকল বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাচ্ছিনা।’

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ