দেবেশ চন্দ্র সান্যাল

উনিশশো একাত্তর সাল দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো আমি তখন রতন কান্দি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম ২৫ মার্চ৭১ কাল রাত থেকে শুরু হলো পাকস্তানি সৈন্যদের নৃশংসতা ওরা বিশে^ জঘন্যতম নৃশংসতার নাম দিলঅপারেশন সার্চলাইট ঘুমন্ত বাঙালিদের উপর চালালো বিনা বিচারে ¦ালাও, পোড়াও, নির্যাতন আর হত্যা পাকিস্তানি হানাদারদের নৃশংসতার সংবাদ পেয়ে বাঙালিদের অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা শেষ বানী প্রদান করলেন দেশ বাসীকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য আহŸান জানালেন জাতির পিতা বললেনÑ… আপনাদের কাছে আমার আবেদন আদেশ দেশ কে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্ত বিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যানজাতির পিতার স্বাধীনতা ঘোষণার লিফলেট অনুসারে ২৫ মার্চ৭১ এর পর আস্তে আস্তে পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যরা সারা দেশের অধিকাংশ যায়গার ক্যাম্প করলো ১৯৭০ সালের জাতীয় পরিষদ প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে হেরে যাওয়া জামায়াতে ইসলাম, মুসলিম লীগ অন্যান্য ইসলামী রাজনৈতিক দলের অধিকাংশ নেতা কর্মীরা পাকিস্তানের পক্ষ নিল পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যদের সহযোগিতার জন্য পীচ কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস অন্যান্য বাহিনী গড়ে তুললো পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যরা কিছু বিহারী যুবকদেরহিন্দুদের শায়েস্তা করতে হবে বলে সংক্ষিপ্ত ট্রেনিং দিয়ে এদেশে নিয়ে এসে ছিল পাকিস্তানি সৈন্যরা সারা দেশে ধর পাকড় করতো পুরুষদের উলঙ্গ করে হিন্দু মুসলমান পরীক্ষা করতোপুরুষেদের বলতো কাপড়া তোলো, চার কলেমা বাতাও, “লোকজনদের হিন্দুদেরকে চিনিয়ে দেওয়ার জন্য জিজ্ঞাস করতোমালাউন কাহা হ্যায়? মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে জিজ্ঞাসা করতোমুক্তি কাহা হ্যায়, মুক্তি কিধার চে আয়া, কিধার মে য্যায়া, মালুম ন্যাহী পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের এদেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় সারা দেশ ব্যপী জ্বালাও,পোড়াও, হত্যা, গন হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ সহ বিভিন্ন মানবতা বিরোধী কাজ করতে থাকলো পাকিস্তানি বিহারী সৈন্যরা তাদের সাথে চাকরি করা বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করতে থাকলো কিছু বাঙালি সৈন্য অস্ত্র নিয়ে অথবা খালি হাতে পালিয়ে এলেন হানাদারেরা তাদেরই সাথী কিছু বাঙালি সৈনিক কে হত্যা করে ছিল পাকিস্তানি সৈন্যদের সহযোগীতা করার জন্য জামায়াতে ইসলাম অন্যান্য ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে পীচ কিমিটি, রাজাকার বাহিনী অন্যান্য বাহিনী গড়ে তোলে পীচ কিমিটির লোক রাজাকারেরা পাকিস্তানি সৈন্যদের আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী হিন্দুদের বাড়িঘর চিনিয়ে দিত পাকিস্তানি সৈন্যদের রাস্তা চিনিয়ে নিয়ে গ্রামের আওয়ামী লীগ হিন্দুদের বাড়ি চিনিয়ে দিতো তারা চিনিয়ে দিত কোন বাড়ির লোক মুক্তিযুদ্ধে গেছে তারা পাকি হানাদারদের তথ্যদিত, বাড়িঘর লুটতরাজ চাদাঁ বাজি করতো পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যরা হত্যা, গণ হত্যা, নির্যাতন, বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ অন্যান্য মানবতা বিরোধী জঘন্যতম কাজ করতো তাদের এই নিষ্ঠুরতা দেখে জাতি স্বম্ভিত হয়ে পড়লো  প্রতিদিন পাকিস্তানি সৈন্যদের নৃশংসার কথা জানতাম বিভিন্ন প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে  তখন স্কুল কলেজ সব কিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ঢাকা সহ অন্যান্য শহরে চাকরি করা আমাদের এলাকার অধিকাংশ চাকুরী জীবী জীবন বাঁচাতে বাড়িতে বাড়িতে এসে অবস্থান নিলেন তাঁদের কাছ থেকে অন্যান্যের কাছ থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস ভয়াবহতার কথা জানতে পারলাম উল্লাপাড়া থানার চড়িয়া কান সোনা ঘোষ পাড়া, সাথিঁয়া থানার ডেমড়া (বাউস গাড়ি রুপসী) করঞ্জা গন হত্যা হলো দেশের ভয়াবহ অবস্থা পাকিস্তানি সৈন্যরা এক এক  রাতে এক এক গ্রাম ঘিরে রেখে ভোর থেকে গন হত্যা চালায় এদেশীয় স্বাধীনতা বিরোধী সহযোগীদের দিয়ে লুটতরাজ চালায় বাড়িঘর দোকানে অগ্নি সংযোগ করে পুড়িয়ে দেয় ২৫ মার্চ কাল রাতের অপারেশন সার্চ লাইট এর পর থেকে জীবন বাঁচানোর জন্য আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী হিন্দুরা অনেকে ভারতে আশ্রয় নেয় বাঙালি সৈন্য, .পি.আর পুলিশ, আনসার অন্যান্যরা প্রতিরোধ যুদ্ধ চালায় তার পর জাতির পিতার নির্দেশ অনুসারে মুক্তিযুদ্ধ চালায় বাঙালি সৈনিক, .পি.আর, আনসার অন্যান্য প্রশিক্ষিত বাহিনীর সাথে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয় এদেশের অধিকাংশ কৃষক, শ্রমিক,ছাত্র অন্যান্য নারীপুরুষ পেশাদার প্রশিক্ষন প্রাপ্ত আধুনিক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাঙালিদের কুলিয়ে উঠা সম্ভব হয় না প্রশিক্ষন অস্ত্র সহযোগিতার জন্য বাঙালি সৈন্য অন্যান্যরা ভারতে আশ্রয় নেয় আমাদের গ্রামে করতোয়া নদী পাড় হয়ে আসতে হবে নৌপথ ছাড়া গ্রামে পাকিস্তানি সৈন্যরা আসতে পারবেনা আমাদের গ্রামের মুসলমানেরা খুব ভালো আমাদের গ্রামের সর্বজনাব ডা. মো: জয়নুল আবেদিন সরকার (জতু ডাক্তার), ভাইস প্রিন্সিপাল মো: নুরুল হক সরকার কেমিষ্ট মো: নজরুল ইসলাম সরকার, ডা.মো: খলিলুর রহমান ,মো: আব্দুল সরকার, মৌলভী মোহাম্মদ হোসাইন, মো: শাহ আলম মাষ্টার, মো: আব্দুল মজিদ সরকার, মো: আবুল কালাম, মো: আকবর আলী মোল্লা, মো: ইউনুস মাষ্টার,মো: আকবর আলী প্রামানিক সহ গ্রামের নেতৃস্থানীয় মুসলমান গণ  মুসলমান যুবক সম্ভাব্য অন্যান্যদের ডেকে বললেন– “ সারা দেশের ভয়াবহ অবস্থার কথা আপনারা সবাই জানেন সারা দেশের যেখানে যাই হোক সবাই দেখবেন আমাদের গ্রামের হিন্দুদের যেন কোন প্রকার ক্ষতি না হয় হিন্দুরা আমাদের আমানত আমরা আমাদের গ্রামের হিন্দুদের রক্ষার জন্য সর্বাত্মক সতর্ক থাকবো আমাদের গ্রামের একজন মানুষও পীচ কমিটির সদস্য, রাজাকার স্বাধীনতা বিরোধী হয় নাই সব মুসলমানেরা হিন্দুদের বিভিন্ন নিরাপত্তা দিয়ে ছিলেন ডেমড়া গণহত্যা পর থেকে আমরা দিন রাত গ্রাম পাহাড়া শুরু করলাম প্রতিবেশী মুসলমান যুবকেয়া আমাদের সহযোগিতার জন্য সাথে থাকলো বড়দের নির্দেশে সর্ব মো: আব্দুল মজিদ, আবুল কালাম , গোলাম মাহবুব নান্নু, মো: আব্দুস ছাত্তার, মো: আনাইমোল্লা, মো: ইমান আলী, মো: নজরুল ইসলাম, মো: লাল মিয়া. মো: শামসুল হক অন্যান্যরা রাত দিন পালা করে করে আমাদের সাথে থেকে পাহাড়া দিল আমাদের পরিবার কয়েক দিন রাতে প্রতিবেশী মুসলমানদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ঘুমাতাম আমাদের গ্রামের মুসলমানেরা এত ভালো যে,তাঁরা আমাদের জন্য ঘর বিছানা ছেড়ে দিয়ে নিজেরা বারান্দায় ঘুমাতেন আমরা কয়েক দিন গ্রামের বাড়ি ছেড়ে আমাদের গ্রাম অপেক্ষা আরো প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত বাচড়া গ্রামের এক বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে থাকলাম একাকী মনে মনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলাম মানুষের বাড়িতে আর কত দিন থাকা যায় আষাঢ় মাসের প্রথম দিকে আবার গ্রামের বাড়িতে ফিরে এলাম আমাদের গ্রামের আমরা অন্যান্য যুবকেরা নিজেদের উদোগে রাত দিন পালা করে করে পাড়া পাহাড়া দিতে থাকলাম আর মুক্তিযুদ্ধের যাওয়ার পথ খুঁজতে থাকলাম শ্রাবণ মাসের প্রথম দিক দিনটি ছিল শ্রাবণ ১৩৭৮ ২৩ শে জুলাই৭১ শুক্রবার বর্ষাকাল রাত টার দিকে দেখি আমাদের বাড়ি অদূরে পালেদের বিলে দুইটি ছই ওয়ালা নৌকা নৌকা দেখে এগিয়ে গেলাম বাচড়া গ্রামের আমার পরিচিত মো: আব্দুল ওহাব কে দেখতে পেলাম জিজ্ঞাস করলাম কী হবে? ওহাব বললো এম পি . জনাব মো: আব্দুর রহমান স্যার এলাকার ইচ্ছুকদের মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং জন্য ভারত নিয়ে যাচ্ছেন আমি বললাম তাহলে আমিও যাবো আমি চলে এলাম বাড়িতে গোপনে আমার জামা কাপড় গোছালাম তারপর আমার পড়ার খাতার একটি পৃষ্ঠা ছিড়ে মাকে উদ্দেশ্য করে একটি চিরকুট লিখলাম চিরকুট টি ছিল-“মা, প্রনাম নিও, বাবাকে আমার প্রনাম দিও বড় দাদা, মেজদাদা, বৌদিকে প্রনাম দিও ছোট ভাই বোনকে ¯স্নেহাশিষ দিও আমি মুক্তিযুদ্ধে গেলাম তোমাদেরকে বলে গেলে যেতে দিতে না জন্য না বলে চলে গেলাম অপরাধ ক্ষমা করিও আশীর্বাদ করিও আমি যেন বিজয়ী হয়ে তোমাদের কাছে ফিরে আসতে পারি ইতিতোমার ছেলে দেবেশদিন টি ছিল আমাদের গ্রামের হাটবার পিতৃদেব হাট থেকে ভালো মাছ এনেছেন, মাতৃদেবী রান্না করছেন আর কিছু ক্ষণ পরেই আমাদের সবাইকে খেতে ডাকবেন আমি বাড়ির কাউকে না বলে গোপনে নৌকায় গিয়ে বসলাম রাত ৩০ মি: এর দিকে শাহজাদপুরের রাজ্জাক এরশাদ ভাই সহ কয়েক জনকে  সাথে নিয়ে একটা নৌকায় এম.পি. জনাব মো: আব্দুর রহমান স্যার এলেন এম.পি.  স্যার কে দেখে আমি দেখা করার জন্য এগিয়ে গেলাম সামনে দাড়িয়ে আদাব দিলাম আমাকে দেখে স্যার বললেনদেবেশ, তুমি কেন? এত ছোট মানুষকে তো মুক্তিযুদ্ধে নিবেনা আমি অনুরোধ করলাম এম.পি. স্যার বললেনঠিক আছে চলো তারপর রতন কান্দি পালেদের বিলের ঘাট থেকে রাত ০০ টার দিকে আমাদের নৌকা ছাড়লো মানসিক ভাবে ভগবান কে প্রনাম করলাম শুরু হলো এক কিশোরের জীবন পন যুদ্ধে যাওয়া আমরা সুজানগর সাত বাড়িয়া হয়ে পদ্মা নদী পাড় হয়ে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার চিলমারি ইউনিয়নের খারিজাথাক গ্রাম দিয়ে বাংলাদেশের বর্ডার অতিক্রম করলাম আমরা ভারতের পশ্চিম বাংলার জলঙ্গী বর্ডার দিয়ে ভারতে ঢুকলাম একটি বি.এস.এফ ক্যাম্পে ঢুকলাম প্রাতঃক্রিয়াদি করে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম এম.পি. স্যার আমাদের গাইডার কে একটি চেয়ারে বসতে দিলেন আমাদের সবাই কে এক লাইনে দাড় করালেন আমাদের গণনা করা হলো আমরা হলাম ২২ জন এম.পি. স্যার আমাদের সাথে মালদহ পর্যন্ত গেলেন মালদহ বাজার থেকে মুড়ি কাঠাল কিনে আমাদের খাওয়ালেন তারপর আমাদের কে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষনের জন্য কামার পাড়া ইয়ুথ ক্যাম্পে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিয়ে তিনি অস্থায়ী প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশে কলিকাতা চলে গেলেন আমরা রাত টার দিকে কামার পাড়া ইয়ুথ ক্যাম্পে গিয়ে  পৌছালাম তাঁরা আমাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন পর দিন সকালে আমাদের সবাইকে ফলোইং করালেন বয়সের স্বল্পতার কারণে ট্রেনিং কর্তৃপক্ষ আমাকে ভর্তি করলেন না নিরুপায় হয়ে আমি আমার ওল্ড মালদহের পিশে মহাশয় বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম তখন ভারতীয়রা বাংলাদেশের লোকদের কে জয় বাংলার লোক বলতো ভারতের ট্রেন বাসে বাংলাদেশের লোকের কোন ভাড়া লাগতো না বাস ট্রেনে ভাড়া চাইতে এলেজয় বাংলাবললেই বুঝতে পারতেন আমরা বাংলাদেশের শরণার্থী কামারপাড়া ইয়ুথ ক্যাম্প থেকে একটি বাসে কাছাকাছির একটি রেল স্টেশনে গেলাম তার পর ট্রেন ধরলাম বারসই রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে ট্রেন বদলাতে হলো আমি স্টেশনে বসে আছি আমার কাছে ট্রেনের টিকেট নাই মোবাইল কোর্টের লোক আমাকে ধরে নিয়ে গেল একটি রুমে বসালো যাদের ট্রেনের টিকেট নাই তাদের ম্যাজিস্ট্রেট এক এক করে ডেকে ডেকে জরিমানা করলো পর্যায়ক্রমে আমার পালা এলো আমাকে নাম জিজ্ঞাসা করায় আমি বললামজয় বাংলা ওনারা বুঝতে পারলেন আমি বাংলাদেশ থেকে গিয়েছি আমাকে জরিমানা না করে ছেড়ে দিলেন পরবর্তী ট্রেনে উঠে ওল্ড মালদহ স্টেশনে নেমে পিসে মহাশয় শ্রী বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য মহাশয়ের বাড়িতে গেলাম কয়েক দিন ওল্ড মালদহ, গাজল, শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি আত্মীয় বাড়ি ঘুরলাম আমার পিশে মহাশয়ের ভগ্নিপতি ছিলেন একটি শরণার্থী ক্যাম্পের ইনচার্জ তিনি আমাকে পরামর্শ দিলেন-“ তুমি ছোট মানুষ তোমার মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার প্রয়োজন নাই আমি তোমাকে শরণার্থী ক্যাম্প ভর্তি করে নিচ্ছি তুমি রেশন, লারকি অন্যান্য সকল সুবিধা পাবে আমি বাংলাদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনের জন্য ভারত এসে  শরণার্থী শিবিরে বসে বসে খাবো ইহাতে সন্মত হতে পারলাম না আবার ফিরে এলাম কামার পাড়া ইয়ুথ ক্যাম্পে আমাদের শাহজাদপুরের রবীন্দ্র নাথ বাগচী রতন কুমার দাস সহ কয়েক জন কে পেলাম তাঁরা আমাকে পরামর্শ দিলেন তুমি কাছের মালঞ্চ (কুরমাইল) ক্যাম্পের ইনচার্জ নং সেক্টরের উপদেষ্টা বেড়াসাঁথিয়া নির্বাচনী এলাকার এম.এন. অধ্যাপক আবু সাইয়িদ স্যারের কাছে যাও আমি তাঁদের পরামর্শে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ স্যার এর কাছে গেলাম আমার পরিচয় দিয়ে আমাকে মুক্তিযুদ্ধে ভর্তি করার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করলাম তিনি আমাকে কামাপাড়া ইয়ুথ ক্যাম্পে ভর্তি করার ব্যাবস্থা করলেন কামাপাড়া ইয়ুথ ক্যাম্পের ভর্তি কর্তৃপক্ষকে আমাকে ভর্তি করার জন্য বিশেষ অনুরোধ করলাম কর্তৃপক্ষ আমাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন আমার দেশ প্রেম, সাহসী মনোভাব অন্যান্য শুনে ভর্র্তি করলেন প্রাথমিক ট্রেনিং ক্যাম্পে আমাদের ফলইং করিয়ে জাতীয় সংগীত গাওয়ানো, পিটি প্যারেড করানো হতো কদিন কামারপাড়া ইয়ুথ ক্যাম্পে থাকার পর আমাকে, রবীন্দ্র নাথ বাগচী, রতন কুমার দাস মো: নজরুল ইসলাম কে ট্রান্সফার করলো মালঞ্চ ট্রানজিট ক্যাম্পে, তারপর মালঞ্চ থেকে কুড়মাইল ট্রানজিট ক্যাম্পে কুড়মাইল থেকে আমাদের কে আনা হলো পতিরাম ক্যাম্পে পতিরাম ক্যাম্প থেকে এক যোগে ভারতীয় আর্মি লরিতে ২০/২২ জন কে নিয়ে আসা হলো দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমার পানিঘাটা নামক ইন্ডিয়ান আর্মি ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রশিক্ষন শুরুর দিনে কোঅর্ডিনেটর প্রথমে ফলইন করিয়ে প্রশিক্ষনের বিভিন্ন নিয়ম কানুন বিষয়ে বললেন তারপর তিনি বললেন দুপুর ১২০০টায় প্রশিক্ষণ প্রধান ডি এস ভিলন স্যার আসবেন ঠিক দুপুর ১২০০টায় প্রশিক্ষন প্রধান শিখ সেনা ডি এস ভিলন স্যার এলেন তিনি আমাদের সকল কে উদ্দেশ্য করে হিন্দিতে যা বললেন তার অর্থ হলো-“… আপনাদের কে স্যালুট আপনারা বীর, আপনারা আপনাদের দেশ মাতাকে হানাদার মুক্ত করতে যুদ্ধ করতে এসেছেন আমরা আপনাদের জন্য তেমন কিছু করতে পারবো না আমরা মানবিক সহায়তা, প্রশিক্ষন অস্ত্র দিব আপনাদের দেশকে আপনাদেরই স্বাধীন করতে হবে আপনাদের জন্ম দাতা পিতা মাতাকে স্যালুট জানাচ্ছি তাঁরা দেশের জন্য তাঁদের সন্তানদের কে মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়েছেন পানিঘাটা ট্রেনিং ক্যাম্প টি ছিল ভারতের শিলিগুড়ি মহকুমার নং সেক্টর অধীন পানিঘাটা স্থান টি ছিল চারি দিকে পাহাড়ের মধ্যে এই বনাঞ্চলে বনমানুষ, নকশাল অন্যান্য খারাপ মানুষের বসবাস ছিল স্থানটি ছিল কার্শিয়ান পাহাড় হইতে নেমে আসা একটি ক্যানেলের দক্ষিণ পার্শে¦ বনাঞ্চল চাঁন মারি স্থানের বামপাশে পাহাড় থেকে নেমে এসেছে ঝর্ণার জল ক্যাম্পে নিয়ে আমাদের তাবুর মধ্যে থাকার সিট করে দিল আমাদের প্রত্যেক কে একটা মগ, একটা প্লেট, দুই টা প্যান্ট, ২টা গেঞ্জি, একটি মশারি, বিছানা পত্র দেওয়া হলো ট্রেনিং শুরু হলো আমাদের ২১ দিনের ট্রেনিং হলো আমাদের কে থ্রিনট থ্রি রাইফেল, এল, এম,জি, এস,এল,আর, ষ্টেনগান, টুইঞ্চ মর্টার, হ্যান্ড গ্রেনেড চার্জ, এক্সপ্লোসিভের ব্যবহার, ফাষ্ট এইড সহ অন্যান্য ট্রেনিং দিল যুদ্ধে সহযোদ্ধা আহত হলে বা শহীদ হলে করণীয় সর্ম্পকে এবং ফাষ্ট এইড সম্পর্কে ধারণা দিল ভারতীয় কয়েক জন হিন্দু বিহারী শিখ সৈন্য প্রশিক্ষন দিলেন আমাদের কোম্পানীর আমাদের কোম্পানীর নাম ছিল ডেল্টা কোম্পানী প্রধান প্রশিক্ষক ছিলেন শিখ সেনা ডি.এস. ভিলন এফ.এফ ধারী মুক্তিযোদ্ধাদের বিদায়ের পূর্বে শ্লেটে চক দিয়ে এফ.এফ নম্বর লিখে বুকের উপর ধরিয়ে ছবি তোলা হতো কিন্তু আমাদের কোম্পানীর প্রশিক্ষনার্থীদের বিদায়ের পূর্বে কদিন ধরে বৃষ্টি হলো আবহাওয়া জনিত কারণে আমাদের ছবি তুলতে পারলেন না বিদায়ের সময়ে জানতে পারলাম আমার এফ.এফ নং৪৭৪২ ট্রেনিং শেষে ইন্ডিয়ান আর্মি ট্রাক যোগে আমাকে, রবীন্দ্র নাথ বাগচী, মো: নজরুল ইসলাম রতন কুমার দাস অন্যান্য প্রায় ৫০ জন কে নিয়ে আসা হলো নং সেক্টরের হেড কোয়ার্টার তরঙ্গপুরে ইহা ছিল পশ্চিম বঙ্গের কালিয়াগঞ্জ থানার তরঙ্গপুর নামক স্থানে অবস্থিত তরঙ্গপুর এনে সিরাজগঞ্জ জেলার ১০ জনের সমন্বয়ে একটি গেরিলা গ্রুপ করা হলো আমাদের গ্রুপের গ্রুপ লিডার নিযুক্ত হলেন বেলুকুচি উপজেলার তামাই গ্রামের এম. মান্নান ডেপুটি লিডার নিযুক্ত হলেন শাহজাদপুর উপজেলার জামিরতা গ্রামের অধিবাসী বাবু রবীন্দ্র নাথ বাগচী আমাদের কে তরঙ্গপুর থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ, রেশনিং পকেট মানি দেওয়া হলো আমার নামে একটি থ্রি নট থ্রি রাইফেল, এক ম্যাগজিন গুলি, একটি হেলমেট ইস্যু করা হলো অন্যান্য গোলা বারুদ, মাইন,গ্রেনেড এক্সপ্লোসিভ কমান্ডার স্যারের কাছে দিলেন মৃত্যু যে হবেনা এমন কোন গ্যারান্টি ছিল না তাই আমি মৃত্যুর প্রস্তুতি যুদ্ধ জয়ের জন্য তরঙ্গপুর বাজার থেকে একখানা শ্রী শ্রী চন্ডী গ্রন্থ, একটি মানচিত্র খচিত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা একটি ব্যান্ডের রেডিও কিনলাম তরঙ্গপুর থেকে কালিয়াগঞ্জ পর্যন্ত বাসে এসে ট্রেনে উঠলাম শিলিগুড়ি রেলওয়ে জংসন ষ্টেশনে এসে আমাদের ট্রেন বদলাতে হলো শিলিগুড়ি স্টেশনের প্লাট ফরমে গ্রুপের সকলের সাথে বসে আছি দেখলাম আমাদের প্লাট ফরমের সামনের লাইনে একটা ফাঁকা ট্রেন দাড়িয়ে আছে আমি টয়লেট করার জন্য ট্রেনের একটি বাথরুমে ঢুকলাম এমন অবস্থায় ট্রেনটি সার্ট করলো আমি ভয় পেয়ে গেলাম তাড়াগুড়া করে বাথরুম থেকে বের হয়ে লাফ দিয়ে প্লাট ফরমের উপর নেমে পড়লাম আমার হাটুতে ব্যাথা লাগলো আজ ভাবিতখন পকেটে কোন আইডি কার্ড ছিল না আমার অপরিচিত যায়গা ওখানকার একজন মানুষও আমাকে চেনে না আমি মারা গেলে আমার সাথীরাও আমাকে খুঁজে পেতেন না আমার লাশ কবর হতো কী দাহ হতো নিশ্চয়তা ছিল না আমার বাবামা সারা জীবন আমার পথ প্রানে চেয়ে থাকবেন আমার লাশ টাও পেতেন না পরে ট্রেন বদলীয়ে আসাম গামী ট্রেনে উঠলাম আসাম গামী ট্রেনে ধুপরী নামক ষ্টেশনে আমরা নামলাম তারপর বাস যোগে মানিকার চর এলাম রাত হয়ে যাবার কারণে রাতে মানিকার চর একটা ভাড়া বডিং থাকলাম পরদিন সকালে মানিকার চর থেকে নদী পার হয়ে এলাম তদানীন্তন রংপুর জেলার কুড়িগ্রাম মহকুমার (বর্তমানে জেলা) মুক্তাঞ্চলে স্থাপিত রৌমারী মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রৌমারী ক্যাম্পে আমরা ¯œান খাওয়া দাওয়া করলাম আমাদের কমান্ডার স্যার সিরাজগঞ্জ জেলার মুক্তাঞ্চল যমুনার চড়ে পৌঁছানোর জন্য একটি বড় ছই ওয়ালা নৌকা ভাড়া করলেন রৌমারী ক্যাম্প থেকে রাতের খাবার খেয়ে রাত :০০ টার দিকে আমাদের নৌকা ছাড়লো ইহা ছিল সেপ্টেম্বর৭১ নৌকা বাহাদূরাবাদ ঘাট, জগন্নাথগঞ্জ ঘাট অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা দিয়ে আসতে হয় আমরা জানতে পেরে ছিলাম বাহাদূরাবাদ ঘাট অত্যন্ত ঝুঁকি পূর্ণ এলাকা ক্যাম্পের পাকিস্তানি সৈন্য রাজাকারেরা ভয়ানক তারা স্পীড বোট নিয়ে রাতে নদী টইল দেয় মুক্তিযোদ্ধাদের নৌকা পেলে ধরে নিয়ে যায় ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক অত্যাচার করে নৃশংস ভাবে হত্যা করে আমাদের কমান্ডার জনাব এম. মান্নান স্যার নির্দেশ দিলেন-”আপনারা সবাই নৌকার ডওরার মধ্যে পজিশন অবস্থায় থাকুন পাকিস্তানি হানাদারেরা ধরতে এলে আমরা ধরা দিব না যুদ্ধ করবো যুদ্ধ করে শহীদ হবো কিন্তু ওদের হাতে ধরা দিব না রাত .০০ টার দিকে আমরা বাহাদূরাবাদ ঘাট এলাকা অতিক্রম করতে থাকলাম ওদের সার্চ লাইটের আলো এসে বার বার আমাদের নৌকাতে পড়ছিল ভগবানের কৃপায়ওরা আর স্পীড বোট নিয়ে ধরতে এলোনা আমরা বাহাদূরাবাদ ঘাট এলাকা অতিক্রম করলাম আমাদের সাথে চিড়া গুড় ছিল ভোরে মাঝিরা এক কাইসা খেতের মধ্যে নৌকা ঢুকিয়ে দিল আমরা নীচে নেমে খেতের মধ্যে প্র¯্রাব পায়খানা করলাম আমাদের সাথে থাকা চিড়া গুড় দিয়ে সকালের জলখাবার খেলাম তার পর নৌকা আবার ছাড়লো তখন কাজিপুর থানার অধিকাংশ এলাকা সহ বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা পাকিস্তানি হানাদারদের দখলে কাজিপুর থানার সম্মুখ দিয়ে আমাদের নৌকা আসবে দেখে শুনে খোঁজ নিয়ে থামিয়ে থামিয়ে দিন ভরে নৌকা এসে পৌছালো সিরাজগঞ্জ হানাদার মুক্তাঞ্চল যমুনার চরে ইহা ছিল টাঙ্গাইল জেলার সিংগুলির চড়ের নিকটবর্তী নৌকাতেই রান্নার ব্যবস্থা ছিল মাঝিরা কোন রকমে ডালভাত অথবা খিচুরী রান্না করে আমাদের খাওয়াতো এই ভাবে খেয়ে না খেয়ে চলছিলাম পরদিন রাতে যমুনা নদীর এপাড়ে চলে এলাম চলে এলাম বেলকুচিকামারখন্দ নির্বাচনী এলাকার এম.এন. জনাব মো: আব্দুল মোমিন তালুকদারের গ্রামের বাড়িতে তিনি তখন বাড়িতে ছিলেন না তাঁর ভাই মো: রশিদ তালুকদার আমাদের থাকা খাওয়া অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতা করলেন অক্টোবর৭১ মাসের মাঝা মাঝির আগ পযর্ন্ত আমাদের গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধা সংখ্যা কম থাকায় সম্মূখ যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত কমান্ডার স্যার নেন নি কমান্ডার স্যারের কাছে জানলাম জনাব মো: আমির ভুলু এর গ্রুপ আমাদের এই এলাকাতেই আছেন আমরা পাকিস্তানি হানাদার সৈন্য তাদের দোসরদের আতঙ্কে রাখার  জন্য গেরিলা কার্যক্রমহিট এন্ড রানচালাতাম পাকিস্তানি সৈন্য বা রাজাকার ক্যাম্পের নিকট বর্তী গিয়ে / টা থ্রি নট থ্র্রি রাইফেলের আকাশ মুখি ফাঁকা গুলি ছুড়ে চলে আসতাম পাকিস্তানি দালাল, পীচ কমিটির লোক অন্যান্যরা আমাদের অবস্থানের কথা জানতে পারতো আমরা দিনের বেলা স্কুলে বা কারো বাড়িতে আত্মগোপন করে থাকতাম মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে দেশের অভ্যন্তরে ছিল দুইটি পক্ষ একটি স্বাধীনতার পক্ষে অন্যটি স্বাধীনতার বিপক্ষে স্বাধীনতার বিপক্ষের পীচ কমিটির সদস্য,রাজাকার, আলবদর, আলশামস অন্যান্যরা স্বাধীনতা বিরোধীরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ কারীদের তথ্য দিয়ে পাকিস্তানি সৈন্য নিয়ে এসে বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ, লুটতরাজ,চাঁদাবাজি করতো মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়ী দাতা বাড়ির মালিককে ধরে নিয়ে নির্যাতন হত্যা করতো হিন্দু আওয়ামী লীগ নেতারা ছিল ওদের বড় টার্গেট হিন্দু নারী পুরুষকে ধরে নিয়ে যেত নির্যাতন, ধর্ষণ হত্যা করতো বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধারাও  পাকিস্তানি হানাদার পক্ষ ত্যাগ তাদের সহযোগিতা করার জন্য বিশেষ ভাবে অত্যাচারী পাকিস্তানি দালাল রাজাকারদের হত্যা করতো গণহত্যা, ধর্ষণ অন্যান্য মানবতা বিরোধী কাজে সরাসরি জড়িত কোন পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যকে ধরতে পারলে ফায়ারিং স্কোয়ার্ডে বিচার করার পরিকল্পনা ছিল যে কারণে অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপে সাহসী একজন কে জল্লাদ হিসাবে মনোনীত করা হয়েছিল আমাদের গ্রুপের জল্লাদ হিসেবে মনোনীত ছিলেন দৌলতপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো: শামসুল হক আমরা এমন কোন পাকিস্তানি হানাদার সৈন্য ধরতে পারি নাই আমরা কখনো কাউকে মারি নাই আমাদের গ্রæপের নীতি ছিল– “আমরা আমাদের দেশী কোনো ভাই কে হত্যা করব না বুঝিয়ে তাদের কে স্বাধীনতার পক্ষে আনবোযে কারণে আমাদের মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ কোন স্বাধীনতা বিরোধীকে ধরি নাই, অত্যাচার বা হত্যা করি নাই আমরা নিজেরা বা তাদের আত্মীয়ের মাধ্যমে বুঝিয়ে বিভিন্ন ভাবে স্বাধীনতা বিরোধীদের স্বাধীনতার পক্ষে আনার চেষ্টা করতাম আমরা প্রতিটি মুহূর্তে আতঙ্কে থাকতাম যে কোন সময় পাকিস্তানি হানাদাররা আমাদের আক্রমন করতে পারে আমাদের থাকা খাবার কোন নিশ্চয়তা ছিল না আমরা আজ শেল্টারে কাল সে শেল্টারে থাকতাম কোন শেল্টারেই একাধিক দিন থাকতাম না কোন কোন দিন শেল্টারের অভাবে সারারাত চিড়া গুড় খেয়ে রাত্রি জেগে স্কুলের বেঞ্চে শুয়ে থাকতে হতো কি যে অমানবীয় কষ্ট আমাদের শেল্টার পালা ক্রমে আমরা দুজন করে করে পাহাড়া দিতাম প্রতি রাতে কমান্ডার স্যার আমাদের পাশ ওয়ার্ড দিতেন আমরা রাতে বিভিন্ন রাজাকারদের বাড়িতে গিয়ে তাদের বুঝাতাম সকালে আমরা অস্ত্রে ফুল থ্রু মারতাম, পরিস্কার করতাম অস্ত্রে তেল দিতাম তখন দেশের অধিকাংশ মানুষ ছিল স্বাধীনতার পক্ষে তবুও স্বাধীনতা বিরোধীদের ভয়ে অনেকে আমাদের কে শেল্টার বা খাবার দিতে সাহস পেতেন না কারণ অধিকাংশ গ্রামেই ছিল পাকিস্তানি দালাল রাজাকার তারা খোঁজ জানলে পাশর্^বর্তী আর্মি বা রাজাকার ক্যাম্পে সংবাদ দিয়ে তাদেরকে নিয়ে এসে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিবে, বাড়ির মালিককে ধরে নিয়ে হত্যা করবে অত্যাচার চালাবে এই ছিল তাদের ভয় আমাদের সাথে সব সময় চিড়া গুড় থাকতো স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ট্রেনিং দেওয়ায়ে আমাদের সাথে নিলাম আমি মুক্তিযুদ্ধে যাবার কারণে আমার পিতৃদেব মাতৃদেবী পাগল প্রায় হয়ে গিয়ে ছিলেন একটি অবুঝ কিশোর ছেলের পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ! আমাকে খুঁজে যুদ্ধ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য রাজাকারদের আলটিমেটামে গণহত্যার হাত হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য গোটা পরিবার বাড়িঘর সবফেলে ভীষণ ঝুঁকি নিয়ে ভারতের আসামের মানিকার চড় শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন কোথায় আক্রমণের পূর্বে আমরা রেকী করে দেখতামজয় বাংলাছিল আমাদের রণাঙ্গনের প্রধান ধ্বনি আমরা যুদ্ধ শুরুর পূর্ব  “জয় বাংলা ধ্বনি দিয়ে যুদ্ধ শুরু করতাম যুদ্ধ চলা কালিন সময়েও আমরা মাজে মধ্যেজয় বাংলা ধ্বনি দিতামজয় বাংলারণ ধ্বনি। আমাদের সাহস বাড়িয়ে দিত তারপর আক্রমন করতাম আমি আমার গ্রুপ কমান্ডার রণাঙ্গণের সাথিদের বলে রেখে ছিলাম-“ আমি রণাঙ্গণে মারা গেলে, তরঙ্গপুর বাজার থেকে কেনা জাতীয় পতাকা দিয়ে মুড়িয়ে আমার দেহ নদীতে দিয়ে দিবেনমুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনে আমি মারা গেলে তখন বাংলাদেশে আমার লাশ নিয়ে অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া করার পরিবারের কোন লোক বাংলাদেশে ছিল না সাত নম্ববর সেক্টরের হেড কোর্য়াটার থেকে আমাদের গ্রুপের কমান্ডার নিয়োগ করে ছিলেন বেলকুচি উপজেলার তামাই গ্রামের এম. মান্নান স্যার কে। দেশের অভ্যন্তরে এসে স্থানীয় ভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে কিছু যুবকে আমাদের গ্রুপে ভর্তি করা হয়েছিল।ইহাতে গ্রুপটি বড় হয়ে পড়ায় আমাদের গ্রুপ কমান্ডার ডেপুটিলিডার বাবু রবীন্দ্র নাথ বাগচীকে কমান্ডার করে আর একটি গ্রুপ করে দিয়েছিলেন।আমাকে নিয়োগ করা হয়েছিলবাবু রবীন্দ্র নাথ বাগচীক এর গ্রুপে।আমি দুই জন কমান্ডারের কমান্ডে ৩টি হিট এন্ড রান, ১টি এ্যাম্বুস ও ৩টি গেরিলা/সম্মূখ ভয়াবহ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে বিজয়ী হয়েছি। আমি পাকিস্তানি সৈন্য তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকারদের বিরুদ্ধে চারটি ভয়াবহ সম্মুখ যুদ্ধ করে বিজয় হয়েছি

ধীতপুর যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে আমরা জামিরতা হাই স্কুলে ক্যাম্প করে অবস্থান নিয়েছিলাম ১৪ ডিসেম্বর৭১ শাহজাদপুর থানা হানাদার মুক্ত হয় মুক্তিযোদ্ধা প্রশাসন গড়ে উঠে মো: আব্দুল বাকি মির্জা শাহজাদপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাধিনায়ক থানা প্রশাসক মনোনীত হন তিনি সিও (ডেভ) অফিসে বসতেন শাহজাদপুর থেকে সারা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্ত খরচ বহন করতেন ১৯ ডিসেম্বর ব্যর্থ প্রেসিডেন্ট সেনা বাহিনী প্রধান ইয়াহিয়া খান এর কাছ থেকে জোর করে ক্ষমতা কেড়ে নেয় জুল ফিকার আলী ভুট্টো তিনি জানুয়ারী৭২ আমাদের জাতির পিতাকে কারাগার থেকে মুক্ত করে দেন জাতির  পিতা দিনই লাহোর থেকে সকালে বিমানে যাত্রা করে বিকালে অবরতরণ করেন ইংল্যান্ডের হিব্রো বিমান বন্দরে ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী বাঙালিদের জাতির পিতাকে বিশেষ সম্মান দেখিয়ে সংবর্ধনা দেন জাতির পিতা ১০ জানুয়ারী ব্রিটিশের বিশেষ বিমান যোগে বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা করেন বাংলাদেশে আসার পথে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রধান মন্ত্রীর আমন্ত্রনে ভারতে যাত্রা বিরতি করেন তার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে আসলেন ১২ জানুয়ারী জাতির পিতা প্রথমে রাষ্ট্রপতি হিসেবে এবং পরক্ষণেই রাষ্ট্রপতি পদের ইস্তেফা দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রথা চালু করে প্রধান মন্ত্রী হিসাবে দেশের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করলেন জাতির পিতা আমাদেরকে অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন আমাদের গ্রুপ ২৪ জানুয়ারী৭২ রবিবার সিরাজগঞ্জ সদরস্থ ইব্রাহিম বিহারীর বাসায় অস্ত্র জমা নেওয়ার ক্যাম্পে অস্ত্র গোলা বারুদ জমা দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের দায়িত্ব শেষ করলাম সরকারের উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধাদের পুণর্বাসন কর্মসংস্থানের জন্য ন্যাশনাল মিলেশিয়া ক্যাম্প করা হলো আমি ন্যাশনাল মিলিশিয়া ক্যাম্পে ভর্তি না হয়ে বাড়িতে চলে এলাম কয়েক দিন পর রতন কান্দি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমার বড় দাদা দেবেন্দ্র নাথ সান্যাল এর কাছ থেকে অষ্টম শ্রেণীর অটোপাশের টিসি নিয়ে শাহজাদপুর বহুপাশির্^ উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে লেখা পড়া শুরু করলাম

 

বীর মুক্তিযোদ্ধা দেবেশ চন্দ্র সান্যাল,পিতা: দ্বিজেন্দ্র নাথ সান্যাল,মাতা: নিলীমা সান্যাল, গ্রাম ডাকঘর:রতন কান্দি,ইউনিয়ন:হাবিবুল্লাহনগর,উপজেলা:শাহজাদপুর, জেলা: সিরাজগঞ্জগেজেট নংবেসামরিক সিরাজগঞ্জ১৬৭৯ ভারতীয় প্রশিক্ষণএফ.এফ. নং৪৭৪২ সমন্বিত তালিকা জেলা ভিত্তিক১৪১১, উপজেলা ভিত্তিক১৫৮ মুক্তিযোদ্ধা পরিচিতিম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিষ্টেম, ডিজিটাল  সনদ পরিচয় পত্র নং০১৮৮০০০১৪১১

 

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ