বিশেষ প্রতিনিধিঃ- পাটকেলঘাটায় দীর্ঘদিন ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং আবহাওয়ার পরিবর্তন প্রায়ই খরা তাপ প্রবাহ এবং পানির সংকটের কারনে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তীব্রতাপদহ ও খরার কারণে পাটকেলঘাটায় ফসলের ব্যপকহারে ক্ষতির সম্মুখে হতে হচ্ছে কৃষকদের। কৃষকদের চাষাবাদের মধ্যে রয়েছে – ধান,পাট,গম ও ভুট্টা অন্যতম। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকরা ফসল উৎপাদন করে তা ঘরে তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে । বর্তমানে সারা দেশের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্রতাপ প্রবাহ। পাটকেলঘাটায় ৪১ডিগ্রীর উপরে তাপমাত্রা বিরাজ করছে । তীব্রতাপদহের কারণে প্রাণীকুলে অসহনীয় অবস্থা। বর্তমানে এখন মাঠে রয়েছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল বোরো ধান। তীব্র রোদের তাপে কৃষকের কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তুলতে কাকডাকা ভোরে কৃষকেরা রোদের উত্তাপ ছড়ানোর আগেই ধান কেটে বাড়ি ফিরছেন । বিকালে সূর্যের প্রখর তাপ নেমে গেলে কৃষকরা কাঁচি নিয়ে ছুঁটছে মাঠে ধান কাটার জন্য। গতকাল পাটকেলঘাটার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়,প্রচন্ড তাপদহের কারণে মাঠে বোরোধান কাঁটতে তীব্র রোদে কৃষকদের কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। ।কুমিরা ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের মোঃ কলিমউদ্দীন বলেন, প্রখর রোদের তাপে হিটস্ট্রোকের ভয়ে কৃষকরা ভোর বেলা এবং রাতে ধান কাঁটছেন তাতেও সুফল মিলছে না। রোদের তাপে ধানের শিষ শুকিয়ে শিষ থেকে ধান ঝরে পড়ছে। যে কারণে কৃষকের লক্ষমাত্রার চেয়ে কাংখিত ফসল কম উৎপাদন হচ্ছে।সরুলিয়া ইউনিয়নের যুগীপুকুরিয়া গ্রামের আমচাষী কামরুল ইসলাম বলেন, রোদের তীব্রতায় গাছ থেকে আম ঝরে পড়ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আমচাষীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। তৈলকুপি গ্রামের টমেটো চাষী শাহীন গাজী জানান, প্রচন্ড রোদে আমার গাছের পাতা শুকিয়ে গাছ মরে যাচ্ছে । আমি সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ফসল করেছি। এখন আমি কি করব বুঝে উঠতে পারছি না। খলিষখালী ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামের মোসলেম মোল্যা জানান, আমি এ বছর ৪ বিঘা জমিতে করলা, ভেন্টি, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, খিরাই সহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করেছি। অতিরিক্ত গরমের ফলে গাছ শুকিয়ে পানির অভাবে মারা যাচ্ছে। তাতে করে প্রায় এক লক্ষ টাকার ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের আড়ংপাড়া গ্রামের অমল দাশ জানান, অতিরিক্ত তাপদাহে আমার জমির ভুট্টা গাছ পুড়ে,গাছ শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। তীব্র গরমে কৃষকের ফসল রক্ষার জন্য তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আগামী আরও কিছুদিন তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এসময় বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা কেন্দ্র ইনস্টিটিটিউট কর্তৃক চাষিদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। মাটির বৈশিষ্ঠের উপর ভিত্তি করে ফলন্ত আম গাছে ৭-১০ দিন অন্তর সেচ প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া অন্যান্য ফল যেমন, লিচু, জামরুল, জাম, কাঁঠাল ইত্যাদি ফলন্ত গাছেও ৭-১০ দিন অন্তর সেচ প্রদান করা প্রয়োজন। পরিবর্তিত বেচিন পদ্ধতিতে গাছের ৪ পাশে রিং করে সেচ প্রদান করা উত্তম। তবে প্লাবন পদ্ধতিতেও সেচ দেওয়া যাবে। তাপ প্রদাহ কমলেও ফল পরিপক্ক পর্যন্ত ১৫ দিন অন্তর সেচ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এতে ফল ঝরে পড়া কমবে ও ফসল বৃদ্ধি পাবে। মাটিতে পর্যাপ্ত রস ধরে রাখার জন্য গাছের গোড়ায় খালচিং করে পানি দেওয়ার প্রয়োজন।

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ