মূল্য সংযোজন করের (মূসক/ভ্যাট) ক্ষেত্রে সবাই চায় ছাড়। তবে মোবাইল অপারেটরগুলো সুযোগ থাকলেও ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে অনাগ্রহী। তারা চায় ভ্যাটের হার হোক ১৫ শতাংশ।

দেশের মোবাইল অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) গত ৩০ জুন একটি চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দিন, অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কার্যকর হয়েছে, যা এত দিন ৫ শতাংশ ছিল।

২০১৮ সালের জুলাই থেকে ইন্টারনেটে ৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করা হয়েছিল। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে ইন্টারনেট সাশ্রয়ী করতে এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে তখন উল্লেখ করা হয়েছিল।

অপারেটরগুলোর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বলছেন, ভ্যাটের চাপ বাড়ায় ইন্টারনেটের দাম বাড়তে পারে। ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ হলে গ্রাহকের ওপর যে চাপ বাড়তে পারে, তা স্বীকার করেন বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিটিআরসি এ বিষয়ে অপারেটরদের সঙ্গে একমত। বিষয়টি নিয়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির উদ্যোগে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

কেন ১৫ শতাংশে ফেরা

ভ্যাট আরোপ মানে হলো গ্রাহকের কাছ থেকে পণ্য ও সেবার মূল্যের সঙ্গে বাড়তি অর্থ আদায়। এ অর্থ আদায় করে সরকারের কোষাগারে পৌঁছে দিতে হয় অপারেটরগুলোকে। ৫ শতাংশের বদলে অপারেটরগুলো ১৫ শতাংশ হারে কেন ভ্যাট দিতে চায়, তা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিলেন একটি অপারেটরের সংশ্লিষ্ট শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা।

তিনি জানান, ৫ শতাংশ ভ্যাট হারের ক্ষেত্রে রেয়াত (সরকারের কাছ থেকে ছাড়) নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এতে ঘোষিত হার কম হলেও কার্যকর ভ্যাট হার অনেক বেশি পড়ে। তার ওপর এবারের ২০২২–২৩ অর্থবছরের বাজেটে নতুন কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। ফলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট হারে ফিরে যাওয়াই ভালো।

নিয়ম হলো, পণ্য যতবার হাতবদল হয়, ততবার ভ্যাট আরোপ হয়। ধরা যাক, একটি পণ্য আমদানির সময় আমদানিকারক ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে এলেন। এতে ১০০ টাকায় ভ্যাট দাঁড়াল ১৫ টাকা। তিনি পণ্যটি বিক্রির সময় ১২০ টাকা বিক্রি করলেন। এর ওপর ১৫ শতাংশ ধরে ভ্যাট আসবে ১৮ টাকা। তিনি আগে ভ্যাট হিসেবে দেওয়া ১৫ টাকা রেখে ৩ টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দেবেন। খুচরা বিক্রেতা ১২০ টাকার পণ্য বিক্রি করলেন ১৫০ টাকায়। সেখানে ভ্যাট আদায় করলেন সাড়ে ২২ টাকা। তিনি যে ১৮ টাকা আগে দিয়েছিলেন, সেটা রেখে দিয়ে সাড়ে ৪ টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দেবেন।

এ ‘রেখে দেওয়ার’ ব্যবস্থাকে বলা হয় রেয়াত। পণ্য ও সেবা কেনার জন্য যে ভ্যাট মোবাইল অপারেটররা দিয়ে থাকেন, সেটাই তাঁরা আবার রেয়াত নিতে পারবেন ইন্টারনেট গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া ভ্যাটের অর্থ থেকে। ১৫ শতাংশের নিচে কোনো ভ্যাট হারে এ রেয়াতের ব্যবস্থা নেই। এতে কার্যকর হার বেশি পড়ে। অবশ্য ছোট ব্যবসায়ীরা রেয়াতের জন্য এত হিসাব–কিতাব রাখতে পারেন না। তাঁদের জন্য কম হারের ভ্যাটই সুবিধাজনক।

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ