মোঃ আরিফুল হাসান, ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি

কানায় কানায় পূর্ণ দর্শক-শ্রোতা, তবে যেন পিনপতন নিস্তব্ধতা। শুধু ভেসে আসছে একটি কণ্ঠস্বর। ফিলিস্তিনের যুবক কারাম রাইদ আইয়াদের মুখে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। ভিন্ন ভাষায়, ভিন্ন মেজাজের ভাষণে আপ্লুত রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক– সবাই। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে গতকাল বিকেলে ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই ব্যতিক্রমী আয়োজন ছিল শেখ জামাল স্টেডিয়ামে। এতে একে একে সাতটি ভিন্ন ভাষায় নানা বয়সী ভিনদেশি মানুষ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের বিভিন্ন অংশ উদ্ধৃত এবং বিশ্লেষণ করেন। তারা নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা ও অভিমত দেন।

এদিনের ব্যতিক্রমী আয়োজন শুরু হয় সকালেই। শহরের অম্বিকা ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সদর আসনের এমপি, সংরক্ষিত আসনের এমপি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, আওয়ামী লীগসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বিকেলে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও ভাষণ উৎসব শুরু হওয়ার আগে ফরিদপুর শহর প্রদক্ষিণ করে ১ হাজার ১০৮ স্কুলশিক্ষার্থী– ‘খুদে বঙ্গবন্ধুর দল’। ভাষণের সব শব্দ ধারণ করে একেকটি শব্দের (১১০৮টি) প্ল্যাকার্ড নিয়ে তারা স্মরণ করে ইতিহাসের সেই মহানায়ককে। যেন তারা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয়– ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না; চাইলেই স্তব্ধ করে দেওয়া যায় না বর্ণ, শব্দ ও বাক্য।

এর পর শুরু হয় ১ হাজার ১০৮ শব্দখচিত বেলুন উড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর অমর বাণীকে বাংলার আকাশে ছড়িয়ে দেওয়ার অভূতপূর্ব এক পর্ব। বেলুন উড়িয়ে ভাষণ উৎসবের উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের এমপি এ. কে. আজাদ, সংরক্ষিত আসনের এমপি ঝর্ণা হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ বাবুল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আরিফ, ফরিদপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা, ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াসিন কবির ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।

প্রধান অতিথি আব্দুর রহমান বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে বহু অনুষ্ঠানে তিনি গেছেন, তবে এত উন্নত ও মানসম্পন্ন ব্যতিক্রমী আয়োজন তিনি কখনও দেখেননি। জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের এমন আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বিদেশি অতিথিদের বক্তৃতায় ভিন্ন মাত্রায় উঠে এসেছে। এই ভাষণ উৎসবের সব পর্বের বিষয়গুলো হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ আমরা গড়ে তুলব। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এই ভাষণ সোনার বাংলার স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছে। সেই স্বপ্ন পূরণে আমরা নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব– আসুন এই প্রত্যয় ব্যক্ত করি।

ঝর্ণা হাসান বলেন, ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এই ভাষণে জাতির ভবিষ্যৎ রূপরেখা বিদ্যমান। এ নিয়ে বেশি বেশি চর্চা করতে হবে।

জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান বলেন, ১ হাজার ১০৮টি শব্দের নিখুঁত গাঁথুনিতে অমর এ ভাষণ। এক একটি শব্দ এক একটি পুস্তক। এই ভাষণ বিশ্বের মুক্তিকামী ও নিপীড়িত সব জাতিগোষ্ঠীর মুক্তির চিরন্তন অনুপ্রেরণা।

ফিলিস্তিনের কারাম রাইদ আইয়াদ ছাড়াও নিজস্ব ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণের তাৎপর্য তুলে ধরেন আমেরিকার জ্যাকব বার্লিন ও জয়া বার্লিন, ভারতের রবীন্দ্র মুরালিধর শর্মা, জাপানের নাকানো কজি, শ্রীলঙ্কার রেজি পিটার সেবাসটেইন ও নেপালের সুমিত কোহার।

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ