আশ্রাফ উজ- জামান রুবেল।।

মাঠেমাঠে পাকা ধানের সমারোহ। দিগন্তজুড়ে চলছে সোনালি ধানের দোলা। ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। চলছে ধান কাটার উৎসব। সাতক্ষীরার তালায় চলছে ধান কাটার ধুম। কৃষক-কৃষাণীরা ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নে ১৯ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। যেখানে গত বছরে লক্ষমাত্রা ছিলো ২০ হাজার ৫ হেক্টর । কৃষি প্রধান এ উপজেলার শতকারা ৯০ ভাগ কৃষক ধান চাষের ওপর নির্ভরশীল। সাধারণত পৌষের মাঝামাঝি সময় থেকে মাঘ মাসের মাঝ পর্যন্ত এই ধান রোপণ করা হয়। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ পর্যন্ত ধানের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ জমির ধান প্রায় পেকে গেছে। কৃষক এখন পাকা ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সোনালি ধানের ম-ম গন্ধে মনের আনন্দে কাজ করছেন তারা। কথা বলার মতো যেন ফুসরত নেই তাদের। এসব ধান নিয়ে কৃষক কৃষাণী যেমন ব্যস্ততা, তেমনি আনন্দও লক্ষ করা যাচ্ছে তাদের মধ্যে। কৃষকের ধান কাটার আনন্দ গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমকেও হার মানাচ্ছেন। উপজেলার খলিলনগরের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, দাম ও আবহাওয়া ভালো থাকায় অন্য বছরের চেয়ে এবার অনেক বেশি ধান চাষ হয়েছে। ধান কাটার শ্রমিকের মজুরি একটু বেশি। মাথাপিছু শ্রমিককে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা দিতে হচ্ছে। উজেলার আড়ংপাড়া গ্রামের কৃষক সোহরাব হোসেন বলেন,আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ধান কেটে গোলায় তুলতে সক্ষম হচ্ছে কৃষকরা। এ বছর তিনি ব্রি ধান ২৮ ও সুবর্ন ৩ ধান চাষ করে ব্যাপক ফলন পেয়েছেন। জেঠুয়া গ্রামের কৃষক আকবর আলী বলেন, সরকারি সহযোগিতা ও কৃষি কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার কারণে কৃষকদের মধ্যে ধানচাষে আগ্রহ বেড়েছে। পানির অভাব ও ঝড় বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের বাম্পার ফলন পাবেন বলে তার আশা। উপজেলা কৃষি অফিসার হাজিরা খাতুন বলেন, ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষক যাতে লাভবান হয় সেজন্য তারা সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন। যেখানেই সমস্যা দেখা যাচ্ছে সেখানেই দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছেন। অধিক ফলনের জন্য পরিমিত সার ব্যবহার, পানি সাশ্রয় এবং সার্বিক পরিচর্যায় কৃষকদের সচেষ্ট হতে সব সময়ই পরামর্শ দিয়ে আসছেন। জানা যায়, অঞ্চলভিত্তিক আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষে কৃষকদের জমি নির্বাচন ও আগ্রহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে হেড টু হেড প্রদর্শনী পস্নটের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সোসাইটি ডেভেলপমেন্ট কমিটি। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্রের সহযোগিতায় তারই অংশ হিসেবে কানাইদিয়া গ্রামের সুবোল দাস ৫৪ শতাংশ জমিতে বিনা ধান-২৫, ব্রি ধান-২৮, ৭৪, ৮৮,সুবর্ন ৩ ও বঙ্গবন্ধু ধান-১০০সহ ছয়টি জাতের প্রদর্শনী চাষাবাদ করা হয়। কৃষক আবু হোসেন বলেন, ছয়টি ধানের মধ্যে ব্রি ধান-২৮ জাতের ধানটিতে রোগবালাই ও চিটা কম হয়েছে। ধান পাঁকলেও গাছ এখনো শক্ত ও সতেজ রয়েছে। সব মিলিয়ে কৃষকদের এ জাতটি নজর কেড়েছে। এসডিসি’র জেলা মাঠ কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, অঞ্চলভিত্তিক আধুনিক উচ্চফলনশীল জাতের ধান চাষে কৃষকদের জমি নির্বাচন ও আগ্রহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে হেড টু হেড প্রদর্শনী পস্নট নিয়ে সংস্থাটি ২০১৭ সাল থেকে কাজ করছে। তেতুলিয়ায় তিনি ৬টি জাতের ধানের প্রদর্শনী দিয়েছিলেন। কর্তন শেষে বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ জাতটিতে কৃষকরা আগ্রহ দেখিয়েছে। আগামীতে এ অঞ্চলের কৃষকরা বেশি ফলনের জন্য এ জাতের চাষাবাদ করবেন বলে জানান তিনি।

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ