মতিউর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধিঃ-

আগের নামকরা গেরস্ত বলতে মাঠ ভরা সোনালী ফসলের ক্ষেত, গোয়াল ভরা গরু,পুকুর ভরা মাছ ও কৃষকের গোলা ভরা ধান এখন প্রবাদ বাক্যে পরিনত হতে চলেছে। পাটকেলঘাটা থানার অন্তরগত গ্রাম বাংলার সমৃদ্ধির প্রতীক ধানের গোলা এখন প্রায় বিলুপ্ত। হারিয়ে যাচ্ছে কৃষিক্ষেত ও কৃষকের ঐতিহ্যবাহী গোলা।মাঠের পর মাঠ ধানক্ষেত থাকলেও অধিকাংশ কৃষকের বাড়িতে নেই ধান মজুদ করে রাখার টিনশেড দিয়ে তৈরী ধানের গোলাঘর। বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর।আগামী প্রজম্মের কাছে ধানের গোলাঘর একটি স্মৃতিতে পরিনত হয়েছে। অথচ এক সময় সমাজের নেতৃত্ব নির্ভার করত কার ক,টি ধানের গোলা আছে এই হিসাব কষে।কণ্যা পাত্রস্থ করতেও বর পক্ষের বাড়ির ধানের গোলার খবর নিত কনে পক্ষের লোকজন।যা এখন শুধু কল্পকাহিনী। গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে টিন ও বাঁশ দিয়ে গোল আকৃতির তৈরী করা ধানের গোলা বসানো হতো উঁচুতে। যা দেখা যেত অনেক দূর থেকে। গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে বাঁশ,বাঁশের বাতা ও কঞ্চি দিয়ে প্রথমে গোল আকৃতির কাঠামো তৈরী করা হতো।কিছু কিছু ক্ষেত্রে বর্গ অথবা আয়তক্ষেত্র আকারে গোলা তৈরী করা হতো। এর মুখ বা প্রবেশ পথ রাখা হতো বেশ উপরে যেন চোর- ডাকাতরা চুরি করতে না পারে।ধানের গোলা বসানো হতো উঁচুতে। গোলা নির্মান করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় আগে দক্ষ শ্রমিক ছিল।এখন আর দেশের বিভিন্ন জেলা-শহর থেকে আসা গোলা নির্মান শ্রমিকদের দেখা মেলে না।পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন। গোলা নির্মানের জন্য তাদের সংবাদ দিয়ে আনতে হতো।তারা এসে নানা পরামর্শ করে( মাটি পর্যবেক্ষন,জায়গা নির্ধারন) নির্মান কাজে হাত দিত।একেকটা গোলা নির্মান করতে খরচ পড়ত তার আকার ও শ্রমিকদের উপর নির্ভর করতো।তবে এক- একটা গোলা নির্মান খরচ পড়ত সেই সময় ১০-২০ হাজার টাকা। বর্ষার পানি আর ইঁদুর তা স্পর্শ করতে পারত না।মই বেয়ে গোলায় উঠে তাতে ফসল রাখতে হতো।এই সুদৃশ্য গোলা ছিল সম্দ্রান্ত কৃষক পরিবারের ঐতিহ্য। কিন্তু সম্প্রতি রাসায়নিক সার,কীটনাশক ও আধুনিক কলের লাঙ্গল যেন উল্টে – পাল্টে দিয়েছে গ্রামাঞ্চলের চালচিত্র। গোলার পরিবর্তে কৃষকরা ধান রাখা শুরু করে বাঁশের তৈরী ক্ষুদ্রাকৃতি ডোলায়।ধান আমাদের উপকরণ কিনতেই কৃষকের বিস্তর টাকা ফুরায়। কৃষকের ধানের গোলা ও ডোলা এখন শহরের বিত্তশালীদের গুদাম ঘরে পরিনত হয়েছে।

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ