মোঃ আরিফুল হাসান, ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি

রাজধানীর বেইলি রোডের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সবাই যখন ছুটাছুটি করছে তখন বুয়েট শিক্ষার্থী লামিসা তার বাবাকে কল দিয়ে বলেছিল- ‘বাবা আমি আটকা পড়েছি, আমাকে বাঁচাও।’ এরপর আর লামিসার সঙ্গে কথা বলা যায়নি। বাঁচানো যায়নি আগুনের ছোবল থেকে। মেয়ের আকুতির সামনে অসহায় বাবা মেয়েকে হারিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছেন।

শুক্রবার (১ মার্চ) লামিসার চাচা রফিকুল ইসলাম সুমন এ তার এ আকুতির কথা জানান।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে বইমেলা ঘুরে বান্ধবীদের সঙ্গে বিরিয়ানি খেতে যায় লামিসা। সেখানে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হলে লামিসা তার বাবাকে ফোন করে বলে ‘বাবা আমি আটকা পড়েছি, আমাকে বাঁচাও’, এরপর আর কোনো কথা হয়নি লামিসার সাথে। একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও লামিসার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, ছোট বেলা থেকেই খুবই শান্ত প্রকৃতির মেয়ে লামিসা। ওর মা মারা গেছে ৬ বছর আগে। বড় বোন হিসেবে সবার খেয়াল রাখতো লামিসা। ওর এভাবে চলে যাওয়া কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছি না।

ভিকারুন্নেসা থেকে এসএসসি ও হলিক্রস থেকে এইচএসসি পাস করে লামিসা বুয়েটে ভর্তি হয়। সে মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ছিল। দুই বোনের মধ্যে লামিসা বড়। ছোট বোন রাইসা এ বছর ভিকারুন্নেসা কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

লামিসার বাবা নাসিরুল ইসলাম শামীম। তিনি এডিশনাল ডিআইজি হিসেবে হেডকোয়ার্টার আরএন্ডসিপিতে কর্মরত রয়েছেন। লামিসার মাতা আফরিনা মাহমুদ মিতু ২০১৮ সালে মারা যান। ঢাকার অফিসার্স ক্লাবে দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন নাসিরুল ইসলাম।

এদিকে লামিসার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলীতে বইছে শোকের মাতম। শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে তার মরদেহ শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলীর বাড়িতে আনা হয়। পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। বাদ জুম্মা শহরের চকবাজার জামে মসজিদে জানাজা শেষে আলীপুর কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

নামাজে জানাজায় অংশ নেন ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ কে আজাদ, অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আলিমুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ, প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ।

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ