মোঃ আরিফুল হাসান, ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি||

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে বন্দি ফরিদপুরের তারেকুল ইসলামের গ্রামের বাড়িতে চলছে আহাজারি। সন্তানকে ফিরে পেতে কান্নাকাটি করছেন আল্লাহর কাছে। বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ছকড়িকান্দি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে। বাড়িতে ঢোকার জন্য দরজার সামনে দাঁড়াতে দেখা গেলো-তারেকুলের বাবা দেলোয়ার হোসেন নিবিষ্টচিত্তে কোরআন তেলাওয়াত করছেন। সাংবাদিকদের কাছে এসময় তারা সন্তানকে ফিরে পাওয়ার জন্য সবার সহায়তা কামনা করেন। একইসঙ্গে সরকার যাতে ওই জাহাজের সবাইকেই জীবিত উদ্ধার করতে পারে সেই আর্তি জানান। বাড়িতে ভিড় করছেন আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশীরা। তাদের একটিই আকুতি, যেকোনো মূল্যে তারা তাদের প্রিয় তারেকুলকে ফেরত চান। তারিকুলের মা হাসিনা বেগমের কান্না থামছেই না। ছেলের ছবি দেখে কান্না করছেন আর তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে বার্তা পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করছেন। হাসিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘তারেকুল খুবই নম্র এবং ভদ্র একটি ছেলে। সাত বছর বয়স থেকে কখনো নামাজ-রোজা কামাই করেনি তারেক।’  ছেলের এমন দুর্দশার খবরে বারবার হু হু করে কেঁদে উঠছেন মা। অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী মো. দেলোয়ার হোসেনের দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট মো. তারেকুল ইসলাম। ছকড়ীকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করে চলে যান ঢাকায়। সেখানে মিরপুরের ড. মো. শহীদুল্লাহ্ কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। ২০১২ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। ২০১৪ সালে নটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরিতে যোগ দেন। সবশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে নতুন করে যোগ দিয়েছিলেন ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া গোল্ডেন হক নামে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর থার্ড অফিসার হিসেবে। পণবন্দি ২৩ নাবিকের মধ্যে ফরিদপুরের সন্তান তারেকুলও এখন পণবন্দি হিসেবে জিম্মি। বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর থার্ড অফিসার তিনি। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর বিয়ে করেন নাটোরের মেয়ে তৎকালীন মেডিক্যালের ছাত্রী মোসাম্মৎ তানজিয়া। বিবাহিত তারেকুল-তানজিয়া দম্পতির এক বছর এক মাস বয়সী একটি মেয়ে আছে। বর্তমানে তারেকুলের স্ত্রী ও সন্তান তার বাবার বাড়িতে রয়েছে। ছকড়ীকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিক রাধা রানী ভৌমিক বলেন, ‘তারেকুল অত্যন্ত একজন মেধাবী ছাত্র ছিল। সে আমাদের এই স্কুল থেকে পড়ালেখা শেষ করে ঢাকায় চলে যায়। তারেকুলসহ সকলের উদ্ধারে সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করি।’ তারেকুলের বাবা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ম্যাসেজের মাধ্যমে কথা হতো তারেকুলের সঙ্গে। হঠাৎ করেই ম্যাসেজ দেয় ‘আব্বু আমাকে মাফ করে দিয়েন’। এ ম্যাসেজ পাওয়ার পর আমি চিন্তিত হয়ে পড়ি। এরপর বড় ছেলের কাছে জানতে পারি তারেকুলের জাহাজে জলদস্যুরা আটকে ফেলেছে। এরপর আর কোনো যোগাযোগ নেই। আজ সকালে একটা ম্যাসেজ দিয়েছে একটি ক্যানেলের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের। আর কোনো যোগাযোগ করতে পারি নাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাহাজ কোম্পোনির সাথে কথা হয়েছে, তারা এখনও কিছু বলতে পারছে না। সুস্থভাবে ছেলেকে ফিরে পেতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি ‘ ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, ‘তারেকুলের বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিক ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। তারিকুলের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শুধু তারেকুল নয়, ২৩ জনকেই উদ্ধারে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় তৎপর রয়েছে। খুব দ্রুতই তাদের উদ্ধার করতে পারবে বলে আশা করি।’

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ