সাভার উপজেলা প্রতিনিধি:

বিচারের বানী নীরবে কাঁদে। বিচার প্রার্থীরা ন্যায় বিচার পাচ্ছে না। বার বার হয়রানীর স্বীকার হচ্ছে হামলাকারী ও দখলদারদের নিকট থেকে। বিরোধ সমাধানে ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালতে মামলা চলমান থাকার পরেও প্রভাব খাটিয়ে দফায় দফায় হামলা করে নিঃস্ব করে দিচ্ছে অসহায় একটি পরিবারকে। সৃষ্ট জটিলতা নিয়ে বিচারের দারপ্রান্তে গিয়ে যেন কোন লাভ হচ্ছে না। হামলা ও দখলকারীদের খুটির জোর এতটাই যে তারা বিচারের ফয়সালাকে তোয়াক্কা না করেই বার বার হামলা ও বসত বাড়িসহ জায়গা দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এমনি এক ঘটনা ঘটেছে সাভার পৌরসভার আনন্দপুর এলাকার অসহায় ইভান ইবনে আসাদের পরিবারের উপর। নানা ভাবে দখলচেষ্টার পর ব্যর্থ হয়ে এবার আগামী সাভার উপজেলা নির্বাচনের এক প্রার্থীর ক্যাম্প তৈরির দোহাই দিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে বাড়ি দখলের চেষ্টা চালিয়েছে সাভার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আয়নাল হক গেদু ও তার ছেলে রাজীবের কিশোর-গ্যাং বাহিনী। শনিবার (২৩ মার্চ) সকাল ১১ টায় সাভার পৌরসভার আনন্দপুর এলাকার ইভান ইবনে আসাদের বাড়িতে হামলা চালায় আইনাল হক গেদু ওরফে গেদু কবিরাজ ও তার ছেলে রাজীব বাহিনীর সদস্যরা। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন ইভান ইবনে আসাদ, তার বাবা আসাদুর রহমান এরশাদ, চাচা ইউসুফ আলী চুন্নু ও চাচাতো ভাই আবির মাসুমসহ তার পরিবারের সদস্যরা। তাদের সবাইকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ – এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসান শিকদার। এর আগে, বাড়ি রক্ষা ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে সাভার মডেল থানায় একাধিক সাধারণ ডায়রি দায়ের করেন ভুক্তভোগী ইভান ইবনে আসাদ। এছাড়াও তার উপর হামলার ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করেছেন তিনি। অভিযুক্তরা হলেন- সাভার পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও আনন্দপুর এলাকার মৃত হযরত আলীর ছেলে আয়নাল হক ওরফে গেদু কবিরাজ(৬১), আয়নাল হকের ছেলে ‘আব্বার ডাকে চল’ কিশোর গ্যাং বাহিনীর প্রধান রাজীব হোসেন(৩৬), ইমন(২১) ও আঁখি ওরফে লেডি আঁখি। এছাড়াও তাদের বাহিনীর সদস্যদের অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। সাধারণ ডায়েরি সূত্রে জানা যায়, পৈত্রিক পাঁচ শতাংশ সম্পত্তিতে ভুক্তভোগী, তার স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে বসবাস করে আসছেন। এই সম্পত্তি নিয়ে আদালতে দেওয়ানী মামলা (মামলা নং – ২৪২/২৩) চলমান রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে এই সম্পত্তি দখলের পায়তারা করে আসছেন আয়নাল হক। গত রবিবার দুপুর ২টার দিকে ভুক্তভোগীর বাসার রুমের তালা ভেঙ্গে ক্ষতি সাধন করেন অভিযুক্তরা। তাদের বাধা দিলে ভীতি প্রদর্শন ও হত্যার হুমকি দেয় আয়নাল হকের লোকজন। এই ঘটনায় আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালত সূত্র জানায়, মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তভার গ্রহণ করেছে। ভুক্তভোগী আহত ইভান ইবনে আসাদ জানান, গত বছরের ৩০ আগস্ট বাড়ীটি দখল করে সাইনবোর্ড লাগানোর চেষ্টা করেন আয়নাল হক ওরফে গেদু কবিরাজ। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় ইভান ইবনে আসাদ একটি জিডি দায়ের করেন। একই দিনে ভুক্তভোগী ও তার স্ত্রী ফাতেমা জেসমিনকে মারধরের ঘটনায় আয়নাল হক ওরফে গেদু কবিরাজ, তার ছেলে রাজীব হোসেনসহ আরো ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। মামলাটি চলমান থাকলেও পুনরায় বাড়িতে দখলের চেষ্টা করছেন আসামিরা। চলতি মাসে খেলার কেরামবোর্ড ঢুকিয়ে আবারো দখল চেষ্টা চালায় গেদু বাহিনী। পরে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ দুই পক্ষকে ডেকে দেওয়ানী মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত যে যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে এমন নির্দেশ দেন। এরপরেও তারা আজ অতর্কিত ভাবে লোকজন নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। ভুক্তভোগীর বাবা আহত আসাদুর রহমান এরশাদ বলেন, আমি সাভারের আনন্দপুর এলাকার খোদেজা বেগমকে বিয়ে করি। আমার মা ঢাকা কালেক্টরির ১৭৪৪ নং তৌজিভক্ত আনন্দপুর মৌজার ১১৫ নং খতিয়ানের এসএ – ১৮২ নং দাগ, আরএস-১৭২ নং দাগের ৫ শতাংশ সম্পত্তি সাভার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ১২৯৫২ নং দলিলের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে আমার নামে লিখে দেন। দীর্ঘদিন আমি প্রবাসে থাকায় আমার স্ত্রী পরকীয়ার লিপ্ত হওয়ায় আমি প্রবাসেই থেকে যাই। আমার ছেলে ইভান ওই সম্পত্তিতে বসবাস করে আসছে। তবে দেশে এসে জানতে পারি আমার সাবেক স্ত্রী খোদেজা বেগম জাল দলিলের মাধ্যমে এই সম্পত্তি তার চাচাত ভাই আয়নাল হক গেদুর মাধ্যমে দখলের চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আয়নাল হক গেদু সাথে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসান সিকদার বলেন, আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এভাবে দখল চেষ্টা করা অবৈধ। ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ