সাতক্ষীরায় শিমুলের ডালে ডালে শোভা পাচ্ছে অপরুপ সৌন্দর্যের প্রতীক শিমূল ফুল। লালগালিচার চাদরে ঢাকা গাছতলা গুলো।
মোঃ আরশাদ আলী সাতক্ষীরা থেকে।
ঋতুরাজ বসন্তে ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে সাতক্ষীরার বিপন্ন প্রায় শিমুল বা তুলা গাছ। শিমুল ফুলের রক্তিম রঙে প্রকৃতি সেজেছে এক রঙিন রূপে। গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে নয়নাভিরাম শিমুল বা পলাশ ফুল। প্রকৃতিকে যেন আপন হাতের জাদুর ছোঁয়ায় সাজিয়েছে শিমুল ফুলের অপরুপ শোভায় এক নতুন রূপে। বাতাসে দোল খাচ্ছে শিমুল ফুলের রক্তিম আভা। গাছের ডালে ফুটে থাকা শিমুল ফুল মানুষের মনকে রাঙিয়ে তুলেছে।সাতক্ষীরা জেলায় ফাল্গুন মাসজুড়ে শিমুল ফুল লাল পাপড়ি মেলে সৌন্দর্য বিলাচ্ছে। দূর থেকে হঠাৎ দেখলে ঠিক মনে হবে, কেউ লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছেন প্রকৃতির মাঝে। প্রকৃতির এমন অপরূপ সৌন্দর্য বারবার মনে করিয়ে দেয় জীবনে আবারও বসন্ত এসেছে ফুলে ফুলে ভরে গেছে আজ আমাদের মন।
জেলার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে জানা গেছে, শিমুল বা তুলা গাছে বসন্তের শুরুতেই ফুল ফোটে। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে আপনা-আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে তুলার সঙ্গে উড়ে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই কোন রকম পরিচর্যা ছাড়াই এই পলাশ বা শিমুল গাছের জন্ম হয়।শিমুল গাছের কাঠ অন্যান্য যেকোন গাছের কাঠ থেকে অনেকটা আলাদা এবং এই কাঠ দিয়ে হার্ডবোর্ডসহ বিভিন্ন জিনিস পত্র তৈরি করা হয়।আসলে শিমুল,পলাশ বা পাপড়া নামেই এ গাছটি আমাদের অঞ্চলে অধিক বেশি পরিচিত এবং অনেকটা প্রাকৃতিকভাবেই শিমুল গাছ বেড়ে উঠে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় শিমুল গাছে সাধারণত ৫/৭ বছর বয়স থেকে ফুল-ফল হওয়া শুরু হয়ে থাকে। পরিপক্ব শিমুল ফল বা পাপড়া থেকে সেই কাঙ্খিত দেশীয় জনপ্রিয় তুলা হয়ে থাকে।পাপড়া ফল থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে তুলা বের করা হয়ে থাকে। সেই তুলা দিয়ে বালিশ, তোশক ও লেপসহ বিভিন্ন জিনিস পত্র তৈরি করা হয়। এই তুলার জনপ্রিয়তা অনধিকাল ধরে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের প্রতিক হয়ে আছে। ফলে এখন পর্যন্ত শিমুলের তুলার কোন জুড়ি নেই।এর চাহিদা সবসময়ই তুঙ্গে থাকে। শিমুল গাছ কেবল সৌন্দর্যই বাড়ায় না এই গাছে রয়েছে ঔষধিসহ নানা উপকারিতা এবং অর্থনৈতিকভাবেও বেশ গুরুত্ব বহন করে।জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে শিমুল ফুলের সমাহার। বসন্তের শুরু থেকে প্রকৃতি যেন নিজগুনে অপরূপ সাজে সেজে উঠেছে আপন মহিমায়। রাস্তার পাশে চোখ ধাধানো শিমুল ফুলের সৌন্দর্য দেখলে অবশ্যই যেকোন
প্রকৃতিপ্রেমীদের নজর কাড়বে। পাখি আর মৌমাছিদের আনাগোনা চোখে পড়ার মত নয়নভিরাম মনোরম দৃশ্য।এ দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমী যেকোনো পথচারী দাঁড়িয়ে দেখতে বাধ্য হবে। রাস্তার পাশে, পুকুরপাড়ে শিমুল গাছের ফুল বাতাশে দোল খাওয়ার এমন অসাধারণ দৃশ্য পথচারিসহ দর্শনার্থীদের মন কাড়ছে।ফাল্গুনের আগমনে পলাশ, শিমুল বা তুলা গাছগুলো খেলছে যেন চোখ ধাধানো আগুনে খেলা। লাল লাল শিমুল ফুলে সাতক্ষীরা জেলা জুড়ে সেজেছে রক্তিম আভায়। তবে ইতিমধ্যে শিমুল গাছের তলায় ঝরে ঝরে পড়ছে লাল লাল শিমুল ফুল। দেখলে মনে হবে গাছতলা গুলোতে লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছে আমাদের বরন করার জন্য। এ যেন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। তবে শিমুল ফুলের আলাদা কোনো সুগন্ধ না থাকলেও যেকোন পথচারীদের খুব সহজেই বিমোহিত করে এই শিমুল ফুল। আর সূর্যের আলোয় সেদিকে তাকালে চোখ ঝলসে ওঠে অনন্য সৌন্দর্য্যের নিখুঁত কারুকার্যে।একান্ত আলাপচারিতায় দৈনিক সাতক্ষীরার সকালের সাংবাদিক মোঃ রবিউল ইসলাম জানান- মাত্র এক দশক আগেও সাতক্ষীরার গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় যত্রতত্র গাছে গাছে শোভা বর্ধন করতো শিমুল ফুল। তবে কালের বিবর্তনে ঋতুরাজ বসন্তেও এখন আর যেখানে-সেখানে আগের মতো চোখে পড়ে না রক্তলাল শিমুল গাছ। মূল্যবান এ গাছটি আশাতীত ভাবে কমতে শুরু করেছে গত কয়েক বছর ধরে। এভাবে নির্বিচারে কর্তন করতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে অত্যন্ত জনপ্রিয় এ গাছটি একসময় বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন। বর্তমানে শিমুল গাছ এখন বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। অথচ একসময় এ অঞ্চলের মেয়েদের বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে প্রথম পাঠানোর সময় দেশী তুলার তৈরি লেপ,বালিশ ও তোষক দেওয়াটা রীতিমতো রেওয়াজ হয়ে দাড়িয়েছিল।কিন্তু কালের বিবর্তনে আস্তে আস্তে শিমুল গাছ কমতে থাকায় চিরাচরিত সে রেওয়াজ থেকে মানুষ বেরিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া
গণমাধ্যম কর্মী ও ইউপি সদস্য মোঃ আরশাদ আলী জানান-
ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে প্রকৃতিকে আজ অপরূপ সাজে ফুটিয়ে তুলেছে শিমুল ফুল। গ্রাম বাংলার এই শিমুল গাছ আগে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনে দিত।সাধারণ মানুষেরা এই শিমুলের তুলা কুড়িয়ে বিক্রি করতো। অনেকে নিজের গাছের তুলা দিয়ে বানাতো লেপ, তোশক ও বালিশ। এসব তুলা দিয়ে তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা ও গ্রহণযোগ্যতার সাথে অন্য কোন তুলার তুলনা হয়না।একসময় এই তুলা দিয়ে তৈরি জিনিস পত্র আভিজাত্যেরও পরিচয় বহন করতো। তখন সহজলভ্যতার কারনে শিমুলের তুলা বিক্রির ব্যবসা করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে বসেছে অত্যন্ত জনপ্রিয় তুলার জিনিস পত্র। সময়ের বিবর্তনে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে এই পলাশ বা শিমুল গাছ। এভাবে চলতে থাকলে অদুর ভবিষৎ এ হারিয়ে যেতে পারে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বাহী এই শিমুল গাছ। যদিও আগের মত এখন আর তেমন চোখে পড়ে না শিমুল গাছ। নির্বিচারে শিমুলগাছ নিধন ও নতুন করে চারা রোপণ না করার কারণে সাতক্ষীরাসহ দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চল থেকে শিমুল গাছ বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। তাই অতীব জরুরি ভিত্তিতে এ গাছ সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করেন অভিজ্ঞ জনেরা। এ ব্যাপারে সরকারি, বেসরকারি ও বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন গুলোর নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি অভিজ্ঞ, সচেতন ও দ্বায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে এসে যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন সাতক্ষীরাবাসী।

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ