প্রিয়ব্রত ধর, (অভয়নগর) প্রতিনিধিঃ
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বাপ-দাদার সেই পুরনো স্মৃতি লাঙ্গল-গরুর হালচাষ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে । চাষি খেতে চালাচ্ছে হাল , তাঁতি বুনছে তাঁত, জেলে ধরছে মাছ জালে।গ্রামবাংলার কর্মময় এ সত্য সৌন্দর্য এখন যেন অনেকটাই স্মৃতিময়। কিন্তু,  একটা সময়  ছিল লাঙ্গল-গরুর হালচাষ ব্যতীত জমি প্রস্তুতের কথা চিন্তাই করা যেত না।
আদিকাল থেকেই কৃষি কাজে ব্যবহার হতো এই হালের লাঙ্গল ও মই। বিশেষ করে, নদী মাতৃক বঙ্গ অঞ্চলে সুদীর্ঘকাল ধরে চাষাবাদের মূল হাতিয়ার হিসেবে  এগুলোই ব্যবহৃত হতো। বাঙালি  গৃহবধূরা শাড়ি পরে কোমরে খাবারের গামলা আর হাতে পানির ঘটি নিয়ে সকাল হলেই মাঠের আঁকা-বাঁকা মেঠোপথ ধরে খাবার নিয়ে যেতো হাল চাষির কাছে। সেখানেই অনেকে ভাগাভাগি করে সে খাবার তারা খেতো ।
ছবিঃযান্ত্রিকতার যুগে এখনো কিছু কৃষক গ্রাম বাংলার ঐতিয্যবাহী গরুর হাল দিয়ে জমি চাষ করছে। ছবিটি গতকাল মনিরামপুর কাটাখালি বীল থেকে তোলা। ছবি প্রিয়ব্রত ধর
লাঙ্গল জোঙ্গাল নিয়ে কৃষকরা কাক ডাকা ভোর থেকেই মাঠের প্রান্তরে হালচাষ করতো। কেউবা জমিতে বীজ রোপন করতো। কেউ বা প্রস্তুত করতো জমি। এ চাষের ক্ষেত্রে গরুর হাল,মই, একজন মানুষ ও সাথে একজোড়া গরু / মহিষ থাকত ।
কালের বিবর্তণে যান্ত্রিক চাষাবাদ পদ্ধতির সহজলভ্যতায় মানুষের হাল চাষের সেই আগ্রহে এখন অনেকটাই ভাটা পড়েছে।
কিন্তু শীতকালীন সবজি চাষাবাদ, নিচু জমি কিংবা মৌসুমি চাষাবাদে অনেক ক্ষেত্রে চাষ যন্ত্রের সাময়িক ঘার্তীতে কিছু কিছু এলাকায় এখনও লাঙ্গল-জোয়ালই মূল হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। কারণ, সবজি খেতে ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষ করলে মই দিয়ে সমান করা যায় না। আবার জমিতে সারিবদ্ধভাবে চারা লাগাতে লাঙ্গলের ব্যবহার করতে হয়।
অন্যদিকে, নিচু জমিতে ভারী ওজনের ট্রাক্টর কাদায় দেবে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তারপরও, কালের আবর্তে আধুনিকতার যুগে যান্ত্রিকতানির্ভর যন্ত্র দিয়ে জমি চাষের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে দিন-কে-দিন  গ্রাম বাংলার এ ঐতিহ্য অনেকটা হারিয়ে যেতেই বাধ্য হচ্ছে।এমনকি, বর্তমানে গ্রামীণ সমাজের অনেক চাষিই গরু পালন ছেড়ে দিয়েছে।আবার অনেকেই বাপ-দাদার সেই পুরনো স্মৃতি আঁকড়ে ধরে থাকতে  চেষ্টা করছে। কিন্তু হাল চাষের জন্য তাদের এখন খুব একটা কেউ ডাকে না বল্লেই চলে।
সরজমিনে এক চাষির সঙ্গে কথা বল্লে
ঐ চাষি বলেন, “পূর্বপুরুষের পেশা ছাড়িনি। হাল চাষের জন্য এক জোড়া বলদ গরু, লাঙল-জোয়াল, মই, ছড়ি, গরুর মুখের টোনা লাগে। গরুর লাঙ্গল দিয়ে মাটির গভীরে গিয়ে মাটি তুলে উল্টিয়ে রাখে। ওপরের মাটি নিচে পড়ে আর নিচের মাটি ওপরে। এতে জমিতে ঘাস কম হয়, আর হাল চাষের সময় গরুর গোবর সেই জমিতেই পড়ে এতে একদিকে যেমন জমিতে জৈব সারের চাহিদা পূরণ হয়, তেমনি ফসলও ভালো হয়।”
তবে ট্রাক্টর বা পাওয়ারটিলারের প্রচলন হওয়ায় গরু দিয়ে হাল চাষের কদর কমে গেছে। কম সময়ে বেশি জমিতে চাষে সক্ষম হওয়ায় জমির মালিকরা ট্রাক্টর বা পাওয়ারটিলার দিয়ে জমি চাষ করছে। যে কৃষকরা গরু দিয়ে চায় চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করত কালক্রমে তারা পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে গেছেন।
পোস্টটি শেয়ার করুনঃ