উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:
নড়াইলে আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে শিশুদের নিউমোনিয়ার প্রকোপ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও প্রতিদিন বাড়ছে ঠান্ডাজনিত নানা ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ।
জানা গেছে, নড়াইল জেলা হাসপাতালে মোট শয্যা ১০০টি শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী ভর্তি থাকে। আর ১০০ শয্যার হাসপাতালটিতে শিশুদের জন্য রয়েছে ১৫ শয্যা। বর্তমানে সেখানে প্রায় ১০০ শিশু রোগী ভর্তি রয়েছে। চলতি মাসে শিশু ওয়ার্ডে নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে ৪৯৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এছাড়া হাসপাতালটিতে প্রতিদিন আউটডোরে প্রায় অর্ধশতাধিক শিশুকে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। অন্য দিকে শয্যা সংকটে বাধ্য হয়েই মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে অনেকে।
সরেজমিনে জেলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শয্যা সংখ্যার ছয় গুণেরও বেশি রোগী রয়েছে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে। যার অধিকাংশই নিউমোনিয়ার রোগী। শয্যা সংখ্যা কম হওয়ায় বাধ্য হয়ে রোগীরা এক শয্যায় ২-৩ জন করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কারো ঠাঁই হয়েছে বারান্দার মেঝেতে। এতে চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তিতে রোগী ও স্বজনেরা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু ফাতেমার মাতা নিতু বলেন, সন্তানের জ্বর, কাশি, ঠান্ডা নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। রাতে এসে বেড পাইনি। সকালে বারান্দায় একটি বেড পেয়েছি।
এক রোগি শিশুর মা শামিমা ইয়াছমিন বলেন, তার বাচ্চার জ্বর ও খিঁচুনি হচ্ছে। অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে এসে দেখেন একই বেডে ২-৩টা বাচ্চা রয়েছে। যদি হাসপাতালে বেডের সংখ্যা বেশি হত, তাহলে আমরা ভালোভাবে সেবা পেতাম। সমস্যা সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বারান্দার মেঝেতে ঠাঁই পাওয়া আরেক শিশুর বাবা শাহেদ শেখ বলেন, তার শিশুর কাঁশি, ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্ট হয়েছে। গতকাল হাসপাতালে এসেছেন চিকিৎসা নিতে। ওয়ার্ডের ভিতরে অনেক রোগী। বাইরে ছাড়া থাকার কোনো জায়গা নেই। তাছাড়া আমার প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই। বাধ্য হয়েই হাসপাতালের মেঝেতেই শিশুর চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
নড়াইল জেলা হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আলিমুজ্জামান সেতু বলেন, এই সময় মৌসুম পরিবর্তনের কারণে রোগীদের চাপ থাকে। তবে এবার একটু বেশি মনে হচ্ছে। যা সামাল দিতে আমাদের কষ্টু হচ্ছে। যেহেতু আমাদের জনবল সংকট, শয্যা সংখ্যা সংকট রয়েছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি সবাইকে চিকিৎসা দেওয়ার।
নড়াইল জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আব্দুল গফফার বলেন, আমাদের জনবল সংকট ও শয্যা সংখ্যা সংকট রয়েছে যার ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও চিকিৎসকরা যথা যম্ভব চেষ্টা করছেন চিকিৎসা দেওয়ার।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে যে কয়জন বাচ্চা হাসপাতালে ভর্তি আছে, তাদের অধিকাংশই নিউমোনিয়া আক্রান্ত। যেহেতু এখন মৌসুম পরিবর্তন হচ্ছে, ভাইরাসজনিত রোগ বেশি মাত্রায় হচ্ছে। অভিভাবকদের প্রতি পরামর্শ যে, এই সময় একেবারে ভোরে না উঠিয়ে বেলা হলে তাপমাত্রা বাড়লে বাচ্চাদের ওঠানো।
তিনি আরো বলেন, একেবারে ছোট বাচ্চাদের ১০-১৫ দিন পর পর গোসল করাবে। নিতান্ত প্রয়োজন হলে রৌদ্রে পানি রেখে গরম পানিতে গোসল করাবে। আর একই বাড়িতে যদি অনেকগুলো বাচ্চা থাকে কোনো বাচ্চা যদি রোগাক্রান্ত হয়, তাহলে অন্য বাচ্চাদের তার কাছ থেকে যথা সম্ভব দূরে রাখতে হবে।

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ